ডেঙ্গু: প্রতিরোধ ও প্রতিকার
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুলাই ২০২৩, ১০:২৭ মিনিট
মো. আব্দুল বাসিত–
বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে ডেঙ্গু একটি মারাত্মক ব্যধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা ক্রমেই ভয়ানক রূপ ধারণ করছে, মহামারির রূপ ধারন করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছেনা। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে শুধু রাজধানী ঢাকায় প্রভাব বিস্তার করলেও চলতি বছর তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। ডেঙ্গু জ্বর হল একটি মশা-বাহিত ভাইরাসঘটিত রোগ। এইডিশ নামক মশার কামড়ে এই রোগ হয়। ইদানিং এইডিশ মশা নিজেও তার বংশ বিস্তারের ধরণ পরিবর্তন করে ফেলেছে। পূর্বে যা শুধু জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে বংশ বিস্তার করতো, এখন কাঁদাযুক্ত নর্দমাতেও ডিম পাড়ছে, পূর্বে এই মশা রাতে নিষ্ক্রিয় থাকতো কিন্তু এটি এখন রাতেও সক্রিয় হচ্ছে এবং ক্রমশঃ নতুন নতুন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে।
ডেঙ্গুর লক্ষণঃ
বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে প্রথমবার ডেঙ্গু-তে আক্রান্ত রোগীর বিশেষ কোন উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা যায় না। শুধু অল্প কিছু ক্ষেত্রেই রোগের প্রভাব গভীর হয়।
সাধারণ উপসর্গঃ
উচ্চ জ্বর (৪০ক্কঈ/১০৪ক্কঋ), তীব্র্র মাথার যন্ত্রণা, চোখের পিছনে ব্যথার অনুভূতি, মাংসপেশি এবং অস্থি সন্ধি (নড়হব) তে যন্ত্রণা, বমিভাব, মাথাঘোরা, গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, ত্বকে বিভিন্ন স্থানে ফুসকুড়ি। এই উপসর্গ গুলি রোগ সংক্রমণের ৪ থেকে ১০ দিনের মধ্যে দেখা দেয়। সাধারণত ২ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত উপসর্গ স্থায়ী হতে পারে। দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে রোগের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পায়। সেই কারনে পূর্বে ডেঙ্গু তে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অতিরিক্ত সতর্কতা মেনে চলতে বলা হয়।
গুরুতর উপসর্গঃ
প্রচন্ড পেট ব্যথা, ক্রমাগত বমি হওয়া, মারি বা নাক থেকে রক্তপাত, প্র¯্রাবে এবং মলের সাথে রক্তপাত, অনিয়ন্ত্রিত পায়খানা, ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ (যা ক্ষতের মতো দেখাতে পারে), দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস, ক্লান্তি, বিরক্তি এবং অস্থিরতা।
ডেঙ্গুর জীবাণু মানুষের শরীরের রক্তনালীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে রক্তনালীতে ছিদ্র তৈরি হয়। রক্ত সরবরাহে ক্লট-তৈরির কোষগুলির (প্ল্যাটিলেট) সংখ্যা কমে যেতে থাকে। এর জন্য মানুষের শরীরে শক লাগা, শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তপাত, যে কোন অঙ্গের ক্ষতি এবং শেষ পর্যন্ত রোগীর মৃত্যু হতে পারে। রোগীর শরীরে গুরুতর উপসর্গ গুলির কোন একটি দেখা দিলে অবশ্যই অতি দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত বা রোগী কে নিকটবর্তী হসপিটালে ভর্তি করানো দরকার। অন্যথায় রোগীর প্রাণসংকট হতে পারে।
চিকিৎসাঃ
ডেঙ্গুর চিকিৎসার বিশেষ কোন ঔষধ বা প্রতিষেধক এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। গবেষকরা কাজ করে যাচ্ছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘরোয়া চিকিৎসাতেই কমে যায়। চিকিৎসকরা প্যারাসিটামিল জাতীয় ওষুধ দিয়ে যন্ত্রণা এবং জ্বরের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেন। ঘড়হ-ংঃবৎড়রফধষ প্রদাহ-প্রতিরোধী ওষুধে রক্ত ক্ষরণের সম্ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। রোগের মাত্রা অতিরিক্ত ভাবে বৃদ্ধি পেলে রোগী কে হসপিটালে ভর্তি এবং ডাক্তারি নজরদারি তে রাখা একান্ত জরুরী। হসপিটালে ডেঙ্গু রোগীদের শিরায় (ওঠ) ইলেক্ট্রোলাইট (লবণ) তরল দেওয়া হয়। এতে শরীরে প্রয়োজনীয় জল এবং লবণের যোগান বজায় থাকে।
সহজে হজম হয় না এমন খাবার ডেঙ্গু রোগীদের খাওয়া উচিত নয়। যেমন- আমিষ জাতীয় খাবার, চর্বি, তৈলাক্ত খাবার, ভাজাভুজি ইত্যাদি।
ঘরোয়া প্রতিকারঃ
ডেঙ্গু একটি মশা-বাহিত রোগ। তাই মশার কামড়ের হাত থেকে নিজেকে এবং আপনার পরিবার কে বাঁচান। বাড়ির চারপাশে জল জমতে দেবেন না। জমা জলে মশারা বংশবিস্তার করে। জল জমতে না দিয়ে মশার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সপ্তাহে অন্তত একবার জল জমতে পারে এমন জায়গা পর্যবেক্ষণ করুন। এবং গাছের টব, ফুলদানি, পরে থাকা গাড়ির টায়ারের জমে থাকা জল ফেলে দিন। শরীর ঢাকা জামা কাপড় যেমন লম্বা-হাতা শার্ট, লম্বা প্যান্ট, মোজা এবং জুতা পরুন।
ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। এই সময় অতিরিক্ত সতর্ক থাকুন। রাতে শোবার সময় মশারী ব্যবহার করুন।
ডেঙ্গু জ্বর একটি সাধারণ রোগ। কিন্তু অবহেলা করলে এই রোগ মারাত্মক হতে পারে। শহরাঞ্চলে এর প্রকোপ বেশি। তাই নগরবাসীকে আরেকটু সজাগ ও সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে যাদের ডেঙ্গু হয়েছে তাদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং ভালো থাকুন।
লেখকঃ
মোঃ আব্দুল বাসিত
পোস্টাল অপারেটর, সিলেট বিভাগ।