সাহেবের বাজারে যুক্তরাজ্য প্রবাসীর দোকানকোঠা দখলের অভিযোগ
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুলাই ২০২৩, ৭:০৮ মিনিটসিলেট সদর উপজেলার সাহেবের বাাজরে যুক্তরাজ্যপ্রবাসীর দোকানকোঠা দখল, আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে ভাড়া আদায় ও হয়রানির অভিযোগ ওঠেছে। জমি বিক্রি করে জালজালিয়াতির মাধ্যমে এসব দোকান আবারও নিজেদের দাবি করে ভাড়া আদায় করছে এই চক্র। এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করলেও থানা পুলিশের সহযোগিতা পাচ্ছেন না প্রবাসী। বুধবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাদেপাশা ইউনিয়নের খাগাইল গ্রামের মৃত রিয়াসদ আলীর ছেলে মাহতাব উদ্দিন।
নিজের চাচাতো ভাই যুক্তরাজ্যপ্রবাসী নজরুল ইসলামের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, ‘আমার চাচাতো ভাই নজরুল ইসলাম একজন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী। তিনি শ্রমে ঘামে আয় করা টাকা দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু দেশে আর্থিক নিরাপত্তার অভাব অনুভবসহ নানা জটিলতায় তা আর সম্ভব হচ্ছে না।’
মাহতাব উদ্দিন আরও বলেন, ‘সম্প্রতি নজরুল ইসলাম সিলেট শহরতলীর সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়নের সাহেবের বাজার এলাকায় কিছু জমি ও দোকান কোটা ক্রয় করেছিলেন। গত কয়েক বছর থেকে সেই জমির দখল নিয়ে চলছে টানাটানি। বিক্রেতারা সেই জমি ও দোকানকোটার ভাড়া পর্যন্ত নিয়ে নিচ্ছে। তারা সালিশ থেকে শুরু করে আদালতের রায় কিছুই মানছেন না। আদালত অবমাননা করলেও পুলিশ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না। উল্টো তারা আমাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।’
তিনি জানান, প্রবাসী নজরুল ইসলাম সিলেট সদর উপজেলার ফড়িংউড়া মৌজার জেএল নম্বর ৬০, ৩২৫১ খতিয়ানের সাবেক দাগ নম্বর ২৩১৮, হাল জরিপ দাগ নম্বর ৪১২৬ এর দুই শতক জমির মধ্যে ১ শতকের খরিদা সূত্রে মালিক। ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাদেপাশা ইউনিয়নের আমকোনার মৃত জফুর আলীর ছেলে মৃত ফয়জুল ইসলামের স্ত্রী হাসনা বেগমের কাছ থেকে দোকানকোঠাসহ এক শতক ক্রয় করেছিলেন। একই মৌজা ও জেএল নম্বরের সাবেক ২৩১৮ দাগের হাল জরিপি ৩২৬৪ নম্বর খতিয়ানের ৪১২১ নম্বর দাগের আরও ৩১ পয়েন্ট দোকানকোটাসহ জমি হাসনা বেগমের কাছ থেকে নজরুল ইসলাম ক্রয় করেন। একই মৌজার একই জেএল ও দাগ নম্বরের আরও এক শতক দোকানকোটার মতো জমি জনৈক সিরাজ মিয়ার কাছ থেকে ক্রয় সূত্রে মালিক আমার ভাই নজরুল ইসলাম।
ঘটনার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে মাহতাব উদ্দিন আরও বলেন, ‘ফয়জুল ইসলামের স্ত্রী হাসনা বেগমের কাছ থেকে ক্রয়কৃত সবগুলো দোকান আগের মালিকের নামে মাঠ পর্চা রয়ে গেছে। এ কারণে ওই মালিক সিলেট নগরের কাজিটুলার আলম খানের নাম প্রিন্ট পর্চায় এসেছে। তিনি তার নাম প্রিন্ট পর্চায় আসার সুযোগে একই জমি আরেকবার হাসনা বেগম ও সদর উপজেলার ফড়িংউড়া গ্রামের আলা উদ্দিনের ছেলে ফরিদ মিয়ার কাছে জাল দলিল সৃষ্টির মাধ্যমে বিক্রি করেন। এই দলিলের বিরুদ্ধে আমি নিজে বাদী হয়ে অতিরিক্ত চিফ মেট্র্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করি; যা তদন্তাধীন।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘এই জাল দলিলের সুবাদে তারা দোকানকোটাগুলোর ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে ভাড়া দাবি করেন। কিন্তু ভাড়াটিয়ারা নজরুলের মনোনীতদের বদলে অন্য কারও কাছে ভাড়া দিতে অস্বীকার জানান। হাসনা, ফরিদ, আলম খান, দুলাল, ইসলাম, কামাল ও আলাউদ্দিন সাহেবের বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের কাছেও দোকানকোটার মালিকানা দাবি করেন।’ সমিতি এবং খাদিমনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিষয়টি সালিশে নিষ্পত্তি করতে চাইলে তারা অপারগতা জানান। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যানসহ সমিতির নেতারা দোকানকোটা ৬ মাসের জন্য জিম্মায় রাখেন। আদালতের নির্দেশ পেলে এগুলো সমঝে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। এতে দুইপক্ষ সম্মত হয়।
মাহতাব উদ্দিন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদলত সিলেটে ১৪৫ ধারায় হাসনা বেগম ও তার ৪ ভাই দুলাল জামাল কামাল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এই মামলার রায় ঘোষণা করা হয় গত ৬ এপ্রিল ২০২৩।
কিন্তু এই জমি নিয়ে উচ্চ আদালতে জনৈক আজির উদ্দিন গং এর দায়ের করা মামলায় স্থগিতাদেশ রয়েছে বলে জানানো হয়। তাই, উচ্চ আদালতে সমাধান না হওয়া পর্যন্ত উভয় পক্ষকে নিজেদের অবস্থানে শান্তিশৃংখলা বজায় রেখে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়। মাহতাব উদ্দিন বলেন, ‘শান্তি বজায় রাখতে বিমানবন্দর থানার অফিসার ইনচার্জকেও নির্দেশ দেওয়া হয়। বিমানবন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ উভয়পক্ষকে ডেকে আদালতের নির্দেশনার কথা জানান। কিন্তু গত মে মাসের ভাড়া তারা আদায় করে নেন এবং পরবর্তী মাসগুলোতে তাদের কাছে ভাড়া প্রদানের কড়া নির্দেশ দেন। অন্যথায় তাদেরকে দোকান থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।’
আদালতের নির্দেশ অবমাননার বিষয়টি এয়ারপোর্ট থানার ওসিকে অবগত করলে তিনি কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে এ বিষয়ে আবারও আদালতে দরখাস্ত করার পরামর্শ দেন। এ বিষয়ে আমরা সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবরে আবেদন করেছি। প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হবো। তিনি প্রবাসীর ভাইয়ের জমি রক্ষা এবং প্রতারণা ও জালিয়াতি করার মাধ্যমে হয়রানি করা হাসনা বেগম চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের উর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।