একটি পাতা দুটি কুড়ির প্রেম মায়া সভ্যতার শেষ চিহ্ন
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জুন ২০২৩, ৯:৪৫ মিনিটশহিদ মুহাম্মদ :
চা শিল্প কে কেন্দ্র কে দেশের অর্থনীতিতে আসুক নতুন নতুন সাফল্য । চা শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত সবাইকে জানাই চা দিবসের শুভেচ্ছা।
আজ চা দিবসের বয়ানে একান্ত আপন মনের কিছু কথা বলে যাই। কাচা চা পাতার গন্ধে ভয়ংকর মায়াটান আছে। যে মানুষ হৃদয় দিয়ে একবার এই দুটি কুঁড়ি একটি পাতার সবুজ প্রেমে পড়েছে সে জানে এই প্রেম তার প্রিয়তমার মুখশ্রীর মতো করে আটকে রাখে। শহুরে পড়ুয়া, বিকেল এ বন্দর জংশনে আড্ডাবাজিতে মেতে থাকা ছেলেটা যখন জীবন জীবিকার তাগিদে অরণ্যে ঘেরা এক নিঃসঙ্গ জীবনের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখে, দ্বিতীয় পা ফেলার পূর্বে মনোজগৎ এ সে কতো ভাবনা কতো কল্পনা শত সংকল্পের সভা বসে। সন্ধ্যা নামে নেই শহুরের কোলাহল, নেই সোডিয়াম আলোর ভেলকিবাজি প্রথম সন্ধ্যার আড়াই মুহুর্ত যেনো বন্ধুর বিদেশ গমনের মতো সুনশান নিরব রাত শেষ ভাগের মতো নিশাচর নিশ্চুপ। ভোর সকালে ঘুম ভাঙে মাস্টারিং এর ঘন্টার শব্দে, বিকট শব্দে ঘটর ঘটর আওয়াজ, প্রথম দিন শুনলে মনে হবে উফফ কোথায় এসে পড়েছি কিন্তু ধীরে ধীরে এই ঘন্টার শব্দটা ও প্রিয় হয়ে আসে। সকালে অফিস চৌকিদার ঘন্টা বাজাবে শুরু হবে একজন ট্রি প্ল্যান্টার এর দিন।অবশ্যই ট্রি প্ল্যান্টারা ঘন্টা বাজার অনেক পূর্বেই জেগে উঠেন। শহুর সকাল শুরু হয় নয়টায় আর অরণ্যের মায়াঘেরা সবুজ প্রান্তরে সকাল হয় ভোর পাচটায়। কি নির্মল প্রকৃতি রহস্যাবৃত গল্পজীবন তবু সে অরণ্যের মায়ায় পড়ে ভুলে যেতে হয় বন্ধুর আড্ডা জিন্দাবাজারে রাজা ম্যানশন এ লাইব্রেরি ঘুরে ঘুরে বই ক্রয় করা।বইপত্র লাইব্রেরীর বইগুলো হতে বিপ্লব সংগ্রামের কবিতার বই ক্রয়। সেই বয়স ছিলো রোমান্টিকতার,সময় স্লোগ্নানে ছিলো প্রেম কিন্তু আমি তার ঠিক বিপরীত মেরুতে ছিলাম আমার ভিতরে বাহিরে ছিলো অনিয়ম বিরোধী স্লোগান! সেই আমি টাকে পুরোপুরি বদলে দিলো সবুজ চা পাতা এবং কাচা চা পাতা যখন ক্রাশ হয়ে CFM এর ছয়টা চেম্বারে ছয় রকমের রঙ হয় আর ফ্যাক্টরি ময় ছড়িয়ে পড়ে মায়া সভ্যতার শেষ ঘ্রাণের জাদু! সেই ঘ্রাণময় চা যখন প্রক্রিয়াজাত শেষ ধাপ ড্রাই হয়ে বের হয় ড্রায়ার মেশিন হতে সেই চা হাতে একজন ট্রি প্ল্যান্টারের আনন্দের শেষ থাকে না। ড্রায়ার মেশিনের এর সামনে যখন তৈরি হয়ে বের হয় ব্ল্যাক ট্রি আহ্ চা এর রঙ ঘ্রাণ আর মেকিং কোয়ালিটি ভালো হলে দিনটাই আনন্দের হয়ে যায়। তাহলে কি ট্রি প্ল্যান্টারদের প্রেম মায়াটান সব চা পাতা টেনে নিংড়ে নিচ্ছে?
চা শিল্প নানান সংকটে জর্জরিত, চা শিল্প একি সাথে কৃষিপণ্য আবার শিল্পজাত দ্রব্যে। বাংলাদেশের অনন্য কৃষি সেক্টরের মতো চা সেক্টর ও দিন দিন নানান সমস্যা মোকাবেলা করে করে ক্লান্ত। এক সময় আমাদের চা সোভিয়েত রাশিয়ায় রপ্তানি করা হতো, বিশেষ করে সিলেটের চা পাতার সুনাম ছিলো বিশ্বময়। কিন্তু আন্তর্জাতিক অর্থনীতির মারপ্যাঁচ আমাদের চা এর বাজার সংকোচিত হয়ে এসেছে। কেউ স্বীকার করুক আর না করুক আমরা চা শিল্পে পিছিয়ে যাচ্ছি এটা মেনে নিতে হবে। আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু কোয়ালিটি ও চা এর মূল্যে বৃদ্ধি পায়নি।
চা গাছে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ তার সাথে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্ষতিকর পোকা দমনের ক্যামিকেল এর দাম,বেড়েছে মেশিনারিজের দাম কমেছে কোয়ালিটি কিন্তু চা এর দাম আজ হতে সাত আট বৎসর আগের মূল্যে এ নিলামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চা শিল্পের মালিকেরা। তারপর গত চার বৎসরে শ্রমিক মজুরি হয়েছে দ্বিগুণ। এবং যদি বলি প্রোডাকশন খরচের ১০% খরচ করতে হচ্ছে বিদ্যু পাওয়ার ও গ্যাসের খরচ এ। ২০২০ সালে প্রতি কিউবিক গ্যাস ইউনিটের মূল্য ছিলো ১৩ টাকা, বৃদ্ধি পেতে পেতে ২০২৩ সালে এসে পৌছেছে ৩০ টাকায়। বিদ্যুৎ ইউনিট প্রতি মূল্যে হয়েছে দ্বিগুণ আবার ও লিখতে চায়ের মূল্যে কিন্তু গড়পড়তা সেই ২০২০ সালের মূল্যে এ বিক্রি হচ্ছে। ডলারের বিপরীতে কমেছে টাকার মান কিন্তু নিলামে চা এর মূল্যবৃদ্ধি পায়নি। পরিশেষে বলতে হয়, চা শুধু একটা শিল্প না, এই চা শিল্পে জড়িয়ে আছে ঐতিহ্য আবেগ অর্থনীতির ভারসাম্য। তাই চা শিল্পের সুদিন ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার এবং চা শিল্পে জড়িত সকলেই উদ্যোগ গ্রহণ করবেন আশা করি।
দু’টি পাতা একটি কুঁড়ি অমর হোক, চা এর জড়িত জড়িত মানুষজনের মুখে হাসির বন্যা আসুক। সবাইকে চা দিবসের শুভেচ্ছা ।
শহিদ মুহাম্মদ
সহকারি ব্যবস্থাপক
বৃন্দাবন ট্রি এস্টেট।