জুরি হিসেবে স্নেয়ার্সব্রোক ক্রাউন কোর্টে পাঁচদিন : এক নতুন অভিজ্ঞতা-২
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ মে ২০২৩, ৮:০৪ মিনিট
তাইসির মাহমুদ :
জুরি সার্ভিসে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পর থেকে আমার মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা কাজ করছিলো। আমি দিন গুনছিলাম কখন সেই কাঙ্খিত তারিখটি আসবে, যেদিন কোর্টরুমে বিচারকের সামনে বসে বিচারকার্যে অংশগ্রহণ করবো। অর্জন করবো নতুন এক অভিজ্ঞতা । অবশেষে সেই কাঙ্খিত দিনটি এলো। ৯ মে সোমবার।
সকাল ৯টার আগেই কোর্টে গিয়ে পৌঁছলাম। প্রথমদিন গাড়ি ড্রাইভ করে গেলামনা, কারণ কোর্ট প্রাঙ্গনে পার্কিং সুবিধা আছে কিনা জানা ছিলোনা । ট্রেন ধরেই গেলাম। স্নেয়ার্সব্রোক আন্ডার গ্রাউণ্ড স্টেশন থেকে মাত্র ৫মিনিটের দুরত্বে কোর্টের অবস্থান।
কোর্টের রিসেপশনে পৌছলে জিজ্ঞেস করা হলো- আমি কি জুরি সার্ভিসের জন্য এসেছি । এরপর যথারীতি অন্যদের মতোই সিকিউরিটি চেক হলো । অনেকটা এয়ারপোর্টের সিকিউরিটি চেকের মতোই। মোবাইল ফোন, চাবি, মানি ব্যাগ, বেল্ট সবকিছু একটি ট্রেতে রেখে স্ক্রীনিং মেশিন দিয়ে ভেতরে ঢুকতে হলো। এরপর আবার মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পুরো দেহ পরীক্ষা নীরিক্ষা করা হলো । সিকিউরিটি চেক শেষে নিয়ে যাওয়া হলো একটি ওয়েটিং এরিয়ায়। সেখানে গিয়ে দেখলাম, আমার আগেই দুইজন পৌঁছে গেছেন । তাঁদের সঙ্গে হাই-হ্যালো বলে পরিচিত হলাম। তারাও জুরুর হিসেবে এসেছেন। (উল্লেখ্য, যিনি জুরি সার্ভিসে অংশগ্রহণ করেন তাকে ‘জুরুর’ বলা হয়)।
আধঘণ্টার মধ্যে আরো ২০/২৫ জন এসে যোগ দিলেন । এরপর একসময় ভেতর থেকে একজন অফিসার এলেন । আমাদের সকলকে জড়ো করলেন। আমরা তাকে অনুসরন করতে থাকলাম। তিনি আমাদের একটি বড় হল-রুমে নিয়ে গেলেন। হলের প্রবেশ দ্বারের কাছেই গোলাকার গ্লাস বেস্টিত একটি রিসেপশন ডেস্ক দেখলাম। ভেতরে একজন অশ্বেতাঙ্গ নারী ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি হলেন জুরুর রুমের ম্যানেজার।
আমাদের বলা হলো, বিচার চলাকালে এটাই আমাদের প্রতিদিনের বসা বা অপেক্ষার স্থান । ১০টা বাজার আগেই দলে দলে জুরুররা আসতে থাকলেন । একসময় দেখা গেলো পুরো হলটি বিভিন্ন বর্ণের মানুষে ভরে গেছে । কমপক্ষে ৮০ জন জুরুর এসেছেন। টেবিল ও চেয়ার আছে। পাশে আছে চা-নাশতার কেন্ট্রিন ।
আমাদেরকে হলের কিছু নিয়ম-কানুন বুঝিয়ে দেওয়া হলো। তাছাড়া হলে প্রবেশের জন্য দরজার একটি কোড নম্বরও জানিয়ে দেওয়া হলো, যেন বাইরে বেরুলে পিন টিপে দরজা খুলে প্রবেশ করতে পারি ।
আমরা যার যার মতো করে বসে থাকলাম। কেউ কারো পরিচিত নন। হলের ভেতরে বসে ফোনকল করা নিষিদ্ধ। তবে মোবাইল সাইলেন্সে রেখে ম্যাসেজ চেক করতে বাঁধা নেই । যাওয়ার সময় সঙ্গে একটি বই নিয়ে গিয়েছিলাম। তাই আপাততঃ বইয়ের পাতায় মনোযোগ দিলাম। কোর্টের ডাক কখন পড়বে, কারো জানা নেই। (চলবে)
ছবি: স্নেয়ার্সব্রোক ক্রাউন কোর্ট বিলডিং