হাটখোলায় খাল পুনঃখননে স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করায় চাঁদাবাজি মামলায় হয়রানি
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মার্চ ২০২৩, ৮:৪১ মিনিটসিলেট সদর উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) খাল পুনঃখননে কার্যাদেশ অমান্য ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করায় চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে এলাকার মুরব্বি ও সালিশ ব্যক্তিদের হয়রানি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের উর্ধ্বতন মহলের সুদৃষ্টি ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার (২১) মার্চ দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়নের উমাইরগাঁও গ্রামের লোকজন। এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কমান্ডো সদস্য গোলাম কিবরিয়া।
তিনি বলেন, ‘উমাইরগাঁও গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত চেঙেরখাল নদী থেকে জৈনকার খাল ভাদেশ্বর নদী পর্যন্ত চার কিলোমিটার খাল খনন কাজের কার্যাদেশ পেয়েছে এস. এম. বেলান্স কন্ট্রাকশন লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু, কাজ শুরুর পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জৈনকারকান্দি খালের দিকে না গিয়ে পূর্ব দিকে অর্থাৎ দিঘলকুড়ির দিকে খনন শুরু করে। এ বিষয়ে এলাকার মুরব্বিসহ সচেতন নাগরিকরা তাদেরকে কার্যাদেশ অনুযায়ী খাল পূর্ণ খননের কথা বলেন। কিন্তু তাতে তোয়াক্কা না করে দিঘলকুড়িতে মাছ আহরণের ও পার্শবর্তী কৃষি জমির উপর দিয়ে খনন অব্যাহত রাখা হয়।’
এ বিষয়ে এলাকার মুরব্বি ও সচেতন নাগরিকরা কাজ বন্ধ করতে অনুরোধ করেন এবং এলাকার পক্ষ থেকে জেলা প্রসাশক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সিলেট সদর এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর আবেদন দাখিল করা হয়।
তিনি আরও জানান, গত ১২ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত জেলা মেজিস্ট্রেট সিলেট-এ ফৌজদারি কার্যবিধি আইনে ১৪৫ ধারা অনুযায়ী দরখাস্ত দাখিল করা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি সহকারী কমিশনার (ভূমি), সিলেট সদর সিলেটের আদেশে বিলাজুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা নিত্যনন্দশীল সরজমিনে তদন্ত করে এফ,এস রিপোর্ট প্রদান করেন।
প্রতিবেদনে তিনি সিডিউল অনুযায়ী খনন না করে নতুনভাবে খাল খনন করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়। পূর্ণ খালটি চেঙেরখাল নদী থেকে শুরু হয়ে জৈনকারকান্দি, অধর খাল, নোওয়া বিল হয়ে ভাদেশ্বর নদী পর্যন্ত খাল পূর্ণ খনন শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু খননকারী প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃতভাবে ভিন্ন দিকে খাল খনন করায় এলাকার কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চতুরতা ও কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ না করে অল্প জায়গা দিয়ে খাল খনন করে এলাকার কৃষি জমি মাছ আহরণের কুড়ি ধ্বংস করার পায়তারা করছেন।
তিনি আরও জানান, ১৮৯৮-১৮৯৯ আসাম রেভিনিউ সার্ভে অনুযায়ী, এস.এ সার্ভে ও বিএস সার্ভে অনুযায়ী ম্যাপে দেখা যায়, চেঙেরখাল নদী থেকে জৈনকার খাল ভাদেশ্বর নদীতে যুক্ত হয়।
গোলাম কিবরিয়া অভিযোগ করেন, ‘এলাকার সালিশ ব্যাক্তিত্ব ও মুরব্বিরা প্রতিবাদ করায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের কার্যসহাকারী মো. মনোয়ার হোসেন গত ৮ মার্চ জালালাবাদ থানায় এজাহার দায়ের করেন। তিনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষার্থে সাধারণ জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করে এলাকার সালিশ ব্যক্তিত্ব এবং মুরব্বিদের আসামি করে মিথ্যা মামলা করেছেন।’
সরকারি উন্নয়ন কাজে এলাকাবাসী সবসময় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের অসৎ কর্মকর্তার যোগসাজশে কার্যাদেশ মোতাবেক কাজ না করে উল্টো এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের চাঁদাবাজি বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করায় এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে।’
এ অবস্থায় মামলা প্রত্যাহার, হয়রানি বন্ধ এবং কার্যাদেশ অনুযায়ী খাল পুনঃখনন নিশ্চিত করার জোর দাবি জানান তিনি। এ বিষয়ে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি কামনা করেন এলাকাবাসী।
সংবাদ সম্মেলনে সিলেট সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়নের উমাইরগাঁও গ্রামের সালিশ ব্যক্তিত্ব, ইউপি সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।