গোলাপগঞ্জে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করে ৮ পরিবারকে অবরুদ্ধ করার অভিযোগ
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ৭:৫৯ মিনিটগোলাপগঞ্জ পৌরসভায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কার্যালয়ের পাশর্^বর্তী আট পরিবার অনেকটা অবরুদ্ধ জীবনযাপন করছেন। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কতিপয় কর্মকর্তা ও স্থানীয় ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করে এমন পরিস্থিতি তৈরির অভিযোগ উঠেছে। বুধবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফুলবাড়ী পূর্বপাড়ার মো. আলা উদ্দিন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘গোলাপগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য শিপার আহমদের যোগসাজশে আমাদের আট পরিবারের সদস্যদের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় আমরা অনেকটা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছি। পরিবারের বিশেষ করে নারী, বয়োবৃদ্ধ সদস্যরা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। শিশুরা স্কুল-কলেজে যেতে একটি ছিদ্র্রপথ ব্যবহার করতে হচ্ছে।’
আলা উদ্দিন আরও বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে আমরা ৮টি পরিবারের সদস্য গোলাপগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর দক্ষিণ পাশে সরকারি ৮ ফুট প্রশস্ত রাস্তা দিয়ে নির্বিঘেœ যাতায়াত করে আসছিলাম। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এবং এর পূর্বে পিডিবি কোনো ধরনের বাধা কিংবা প্রতিবন্ধকা সৃষ্টি করেনি।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘হঠাৎ করে ২০২১ সালে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা রাস্তা বন্ধ করে পাকা সীমানা দেয়াল নির্মাণের তোড়জোড় শুরু করেন। এ ব্যাপারে আমরা আপত্তি জানালে তারা তা অগ্রাহ্য করে পাকা সীমানা দেয়াল নির্মাণ করেন। ফলে আমাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ হয়ে যায়। দেয়ালের একটি ছিদ্রপথে বর্তমানে আমাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। সেই ছিদ্রপথটিও স্থায়ীভাবে বন্ধ করার চেষ্টা করেন। তবে আমাদের বাধার কারণে তা হয়নি। তারা সীমানা দেয়ালের বাইরে অবস্থিত খাল দিয়ে যাতায়াত করার পরামর্শ দেন।’
আলা উদ্দিন বলেন, ‘অমানবিক এই কর্মকা-ের বিরুদ্ধে আমি বাদী হয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ডেপুটি ম্যানেজার গোপাল চন্দ্র শিব, ইঞ্জিনিয়ার এন্ড মিটার ইন্সপেক্টর হাসান আহমদ, সিকিউরিটি গার্ড মোতালিব মিয়া ও কদমতলী পূর্বপাড়ার বাসিন্দা শিপার আহমদ মেম্বারকে বিবাদী করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২, সিলেটে একটি অভিযোগ দায়ের করি। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে গোলাপগঞ্জ সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে গোলাপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।’
তিনি আরও জানান, আদালতের নির্দেশে গোলাপগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবিদা সুলতানা গত বছরের ২১ মার্চ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাঁর প্রতিবেদনেও সেখানে রাস্তা থাকার এবং চলাচলের প্রমাণ উঠে আসে। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ‘নালিশা ৩১৬৪ ও ৩১৬৫ নম্বর দাগের জমি এবং ওই দাগের উত্তরদিকের জমিতে গোলাপগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ অফিস বিদ্যমান আছে। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের পূর্বদিকে বাদী গং এর বসতবাড়ি এবং অফিসের পশ্চিম দিকে সরকারি রাস্তা অবস্থিত। বাদী গং পরিবারের লোকজন অতীতে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ভিতর দিয়ে সরকারি রাস্তায় যাতায়াত করতেন। সেখানে একটি রাস্তার চিহ্ন পাওয়া যায়। বর্তমানে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সীমানা দেয়াল নির্মাণ করায় বাদীসহ অফিসের পূর্বদিকের কয়েকটি পরিবারের পশ্চিম দিকের সরকারি রাস্তায় যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘গোলাপগঞ্জ পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান সমাধানের চেষ্টা করলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ইউপি সদস্য শিপার আহমদের বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ এনে তিনি বলেন, রাস্তা নিয়ে মামলা করায় আমাকে তিনি হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।’ এ অবস্থায় মানবিক দিকবিবেচনা করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সীমানা দেয়াল ভেঙ্গে আট পরিবারের সদস্যদের একমাত্র চলাচলের রাস্তাটি খুলে দেওয়ার জোর দাবি জানান তিনি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা করেন তিনি।