কবি রাগিব হোসেন চৌধুরীকে দেওয়ান আহবাব স্বর্ণপদক প্রদান করা হবে
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ৬:৫৭ মিনিটদেশের প্রাচীনতম সাহিত্য প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ প্রবর্তিত ‘কেমুসাস দেওয়ান আহবাব স্বর্ণ পদক-২০২৩’-এর জন্য বিশিষ্ট লেখক, সাহিত্য সংগঠক কবি রাগিব হোসেন চৌধুরীকে মনোনীত করা হয়েছে। ‘কেমুসাস দেওয়ান আহবাব স্বর্ণ পদক ব্যবস্থাপনা কমিটি’র সভাপতি হারুনুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মনোনীত ব্যক্তির নাম ঘোষণা করা হয়। ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব সেলিম আউয়ালের সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন শাবিপ্রবি’র সাবেক ডিন প্রফেসর ড. কামাল আহমদ চৌধুরী, কেমুসাস ভাষাসৈনিক মতিন উদদীন আহমদ জাদুঘরের পরিচালক ডা. মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী বাহার, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ রেনু, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহিন, কেমুসাস-এর সহসভাপতি দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী, পদকের দাতা সদস্য যুক্তরাজ্যের সলিসিটর দেওয়ান মাহদি।
প্রখ্যাত লেখক, রাজনীতিবিদ, সমাজসংস্কারক, ভাষাসৈনিক দেওয়ান আহবাব চৌধুরী বিদ্যাবিনোদ (এমএলএ)’র স্মৃতিরক্ষা তথা অগ্রসর সমাজ বিনির্মাণে তার অবদানকে তুলে ধরা ও নতুন প্রজন্মকে তার চেতনায় উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে কেমুসাস এ পুরস্কার প্রবর্তন করেছে। আগামী ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ সন্ধ্যায় কেমুসাস’র ৮৬ বর্ষের বার্ষিক সাধারণ সভায় কবি রাগিব হোসেন চৌধুরীকে স্বর্ণপদকটি তুলে দেয়া হবে।
রাগিব হোসেন চৌধুরীÑকবি ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সাংবাদিক, সম্পাদক, শিক্ষাবিদ, সংগঠক। সবগুলো পরিচিতি ছাপিয়ে কবি পরিচয়টাই তার প্রিয় একটি পরিচিতি। প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ উপন্যাস হলেও তার তিনটে কবিতার বই বেরিয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑস্বগত সংলাপ, নিষিদ্ধ কবিতা এবং রোকেয়া ভাবী কেমন আছেন। ‘মুক্তির ময়দান কখনো নীরব নয়’ এটি রাগিব হোসেন চৌধুরীর প্রথম উপন্যাস। তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘অশ্রু নয় রক্ত’। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ হচ্ছে- কথকতা: কবিতা প্রসঙ্গ, ফোরাতের তীর থেকে, রাগিব হোসেন চৌধুরীর কলাম ১ম খন্ড, নির্ধারিত প্রবন্ধমালা, শতাব্দীর দুই মনীষা’ ইত্যাদি। কবি রাগিব হোসেন চৌধুরীর একটি বড়ো কাজ ‘সিলেটের শতবর্ষের ঐতিহ্য কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ’ শীর্ষক গ্রন্থ রচনা। লিটল ম্যাগ সম্পাদনার মাধ্যমে কবি রাগিব হেসেন চৌধুরী সম্পাদনা জগতে পা রাখেন। তার সম্পাদিত ‘জাগরণ’ সিলেটের সাহিতাংগনে একটি উল্লেখযোগ্য সাহিত্য সাময়িকী। তার সম্পাদনায় প্রকাশিত অন্যান্য সাময়িকীগুলো হচ্ছে- পাক্ষিক রেনেসাঁ, স্মরণিকা: জগন্নাথপুর উপজেলা, সব মানুষের ধ্যানের ছবি, পাক্ষিক সিলেট পরিদর্শক, সুরমা প্রবাহ, সাহিত্য পত্রিকা, জগন্নাথপুরের কথা, সংলাপ। রাগিব হোসেন চৌধুরীর সম্পাদনায় ভিলেজ ডাইজেস্ট নামে একটি মাসিক পত্রিকা এক যুগের বেশী সময় নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এটি সিলেট-লন্ডনের যৌথ ব্যবস্থাপনায় বের হতো। পত্রিকাটির মূল বিষয়ই ছিলো গ্রাম। ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে রাগিব হোসেন চৌধুরীর সম্পাদনায় আবার আল ইসলাহ বের হতে শুরু করে।
সাংবাদিকতার সাথেও ছিলো কবি রাগিব হোসেন চৌধুরীর সম্পৃক্ততা। যুগভেরীর সংবাদদাতা হিসেবে তার সাংবাদিকতা জীবনের শুরু। তারপর তিনি ছিলেন সাপ্তাহিক ‘সিলহট কন্ঠ’ পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি। তিনি দৈনিক সিলেটের ডাক-এ নিয়মিত কলাম লিখেছেন। ঢাকার সাপ্তাহিক সচিত্র স্বদেশ, যুক্তরাজ্যের সাপ্তাহিক ‘নতুন দিন’ এর সিলেট প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময় যে পত্রিকাগুলোর সাথে বিভিন্নভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন এগুলো হচ্ছেÑ বাংলার মুখ, আবির্ভাব, সমীকরণ, আজাদ, দৈনিক বাংলা, বিচিত্রা, জাহানে নও, সোনার বাংলা, হক কথা, সংগ্রাম, বিক্রম ইত্যাদি।
রাগিব হোসেন চৌধুরী সত্তরের দশকের শুরুতে ‘শাপলা কুঁড়ি আসর’- সিলেট জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। জালালাবাদ মজলিস, আবির্ভাব সাহিত্য গোষ্ঠির সাথেও তিনি জড়িত ছিলেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময়ে সিলট একাডেমি’র সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত), সংলাপ সাহিত্য সংস্কৃতি ফ্রন্টের সেক্রেটারি জেনারেল, সিলেট লেখক ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন।
কবি রাগিব হোসেন চৌধুরীর সাংগঠনিক জীবনের একটি অন্যতম কীর্তি দেশের প্রাচীনতম সাহিত্য প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের কার্যকরী কমিটির বিভিন্ন পদে আসীন হয়ে বিভিন্ন গুরু দায়িত্ব পালন। তিনি ১৯৯০-৯১ এবং ১৯৯১-৯২ সেশনের কমিটিতে কার্যকরী পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯২-৯৩ এবং ১৯৯৩-৯৪ সেশনের কমিটিতে সহ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুলাই অনুষ্ঠিত সংসদের বার্ষিক সাধারণ সভায় কবি রাগিব হোসেন চৌধুরীকে ১৯৯৪-৯৫ ও ১৯৯৫-৯৬ সেশনের জন্য সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই অনুষ্ঠিত সংসদের বার্ষিক সাধারণ সভায় তাকে আবারও ১৯৯৬-১৯৯৭ এবং ১৯৯৭-১৯৯৮ সেশনের জন্যে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। তিনি ১৯৯৮-২০০০ সেশনে কার্যকরী পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০০১-২০০২ সেশনে সহ সভাপতি এবং ২০০৩-২০০৪ এবং ২০০৪-২০০৫ সেশনের সভাপতির দায়িত্ব পান।
সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতি হিসেবে রাগিব হোসেন চৌধুরী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ইংল্যান্ডের বিএনএসএ পুরস্কার, মহাকবি সৈয়দ সুলতান সাহিত্য পুরস্কার (২০০২), জগন্নারপুরবাসীর পক্ষ থেকে ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে গ্রাম বাংলা উন্নয়ন সংস্থা যুক্তরাজ্য শাখা তাকে গণসংবর্ধনা দিয়েছে।
২০০২ খ্রিস্টাব্দে কবি রাগিব হোসেন চৌধুরীর অর্ধশততম জন্মবার্ষিকীতে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শহীদ সোলেমান হলে তাকে ঐতিহাসিক সংবর্ধনা দেয়া হয়। তিনি ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে রাগিব রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। কবি রাগিব হোসেন চৌধুরী দেওয়ান আহবাব স্বর্ণপদক ২০২৩, ও আলোর অন্বেষণ আজীবন সম্মাননা পুরস্কার ২০২৩ লাভ করেন।
কবি রাগিব হোসেন চৌধুরী ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ১১ এপ্রিল সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার কুবাজপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা আবদুল লতিফ চৌধুরী এবং মায়ের নাম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে তাজপুর মঙ্গলচন্ডি হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাশ করার পর তিনি মদন মোহন কলেজে অধ্যয়ন করেন। ছাত্রজীবনেই তার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ঢাকার একটি সাপ্তাহিকীতে। তার কর্মজীবন শুরু হয় শিক্ষকতার মাধ্যমে। তিনি ছিলেন সিলেটের শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক।
রাগিব হোসেন চৌধুরীর স্ত্রী লায়লা রাগিব একজন বিশিষ্ট কবি ছিলেন। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি মাত্র ৩২ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। এরপর তার অনুজা নুরজাহান রুমির সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কবি রাগিব হোসেন চৌধুরী কন্যা রুবায়েত হাসিনা জুমা ও পুত্র লবিদ হোসেন চৌধুরীর জনক।