সংবাদ সম্মেলন : সাবেক র্যাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সম্পত্তি দখল ও হুমকির অভিযোগ ব্যবসায়ির
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ৯:১২ মিনিট
সাবেক এক র্যাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক সম্পত্তি দখল, হয়রানি, গুম ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ করেছেন এক ব্যবসায়ি। মঙ্গলবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন নগরের চৌকিদেখী এলাকার মরহুম আব্দুল হামিদের ছেলে আবুল কাশেম আসাদ।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, নগরের আম্বরখানা মৌজার জেএল নং ৯২ এর ১৮০ নং দাগের হালনাগাদ দাগ ১৩৪৫ এ মোট ৭ শতক ভূমির মালিক আব্দুল হকের কাছ থেকে রেজিস্ট্রি আমমোক্তার নামার সুবাদে তিনি মালিক হোন। সম্প্রতি সিলেট সিটি করপোরেশন রাস্তা প্রশ্বস্ত করার জন্য তার ভূমির দেয়াল ভাঙে। এর পাশে ১৮১ নং দাগে আমার চাচাত বোন নাছরাত রহমান নাদিয়ার মৌরসী স্বত্ব রয়েছে। তার স্বামী মোশাররফ হোসেন ঘরজামাই হিসাবে এখানে বসবাস করছেন। বাড়ি হবিগঞ্জ জেলায়।
এ সময় আসাদ অভিযোগ করে বলেন, মোশাররফ একসময় অ্যালিট ফোর্স র্যাবে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত লোভী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠে এবং কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে তার বিচার হয় এবং তিনি চাকরিচ্যুত হন। এখন তিনি শ্বশুর বাড়িতে থেকে চাচাতো ভাইবোনসহ অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছেন। সিটি করপোরেশন দেয়াল ভাঙার পর আসাদ স্থানীয় কাউন্সিলরের পরামর্শ অনুযায়ী তার ভূমিতে ৪ ফুট উঁচু দেয়াল তৈরির কাজ শুরু করেন। এসময় মোশাররফ হঠাৎ করে এখানে ভূমির মালিকানা দাবি করে তাকে কাজ করতে বাধা দেন। এক পর্যায়ে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে কাজ বন্ধ রাখে এবং ইনজেনশন জারি করে। তিনি লিগ্যাল এইডে মামলা দায়ের করলেও পরে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিতে না পারায় নিশ্চিত পরাজয় জেনে মামলা তুলে নেন। তখন বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ ফাইরুজ তাসনীম তাকে তিরস্কার করেন এবং আমাদের বিরক্ত না করার নির্দেশ দেন। এরপর মোশাররফ ২৬ পয়েন্ট ভূমি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেন এবং দেয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এতে আসাদ বাধা দিতে গেলে তর্কবিতর্ক হয়। আসাদের বাধায় জায়গা দখল করতে না পেরে ক্রোধান্বিত হয়ে তিনি এয়ারপোর্ট থানায় আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করতে যান। তবে থানা পুলিশ তার অভিযোগ গ্রহণ করেনি। বিষয়টি আপোষে নিষ্পত্তির জন্য এয়ারপোর্ট থানার কমিউনিটি পুলিশের সভাপতিসহ দু’পক্ষের আত্মীয় স্বজনের মাধ্যস্থতায় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আপোষ হয় এবং লিখিত আপোষনামায় স্বাক্ষরের সময় তিনি হঠাৎ করে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করে ফিরে যান।
সংবাদ সম্মেলনে আসাদ অনুযোগ করে বলেন মোশাররফ তার এক প্রভাবশালী সরকারি চাকরিজীবী আত্মীয়ের সহযোগীতায় সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট ৩য় আদালতে আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজীর মামলা দায়ের করেন। সাধারণত আদালতে দায়ের করা অভিযোগ তদন্ত শেষে মামলা হিসাবে রেকর্ড করা হলেও এক্ষেত্রে তা হয়নি। মামলার বিষয়টি জানতে পেরে তারা সাথে সাথে ওই আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এবং বিচারক যাবতীয় কাগজপত্র ও ডকুমেন্ট দেখে তাকে জামিন দেন। ওই দিনই মোশাররফ আবারও দেয়াল নির্মাণ শুরু করলে তিনি ৯৯৯ এ কল দেন। পুলিশ এসে কাজ বন্ধ করে দেয়।
আসাদ অভিযোগ করে বলেন শুধু তার জমিই দখল চেষ্টা নয়, তার চাচা মরহুম আব্দুর রহমান মারা যাওয়ার পরই তার উত্তরাধিকারীদের জমিতে ৯তলা একটি ভবন তৈরির কাজ শুরু করেছেন। চাকরিচ্যুত হওয়ায় তার কোন আয়-রোজগারও নেই। এ অবস্থায় বিভিন্নজনকে ফ্ল্যাট দেয়ার নাম করে টাকা নিয়ে এ কাজটি শুরু করেছেন। অথচ উত্তরাধিকার সূত্রে এই ভূমিতে মালিকানা রয়েছে আব্দুস সত্তার, মরহুম আব্দুল মতিনের উত্তরাধিকারীগণ ও নুরুন নাহার বেগম। মোশাররফ লোভে অন্ধ হয়ে অন্যের জমিতে অবৈধভাবে নির্মিতব্য তার এই ভবনের ফ্ল্যাট মানুষের কাছে ভুল তথ্য দিয়ে বিক্রির চেষ্টা করছেন। এতে বিনাদোষে অনেকেই মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
তিনি জানান এ ব্যাপারে তিনি দেওয়ানী আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। আদালত নাদিয়া, তার মা তাহমিনা রহমান ও মোশাররফ হোসেনের বরাবরে নোটিশও জারি করেছেন।
লিখিত বক্তব্যে আসাদ বলেন, মোশাররফ ফেসবুক লাইভে এসে তাকেসহ তার স্ত্রী বোন ও ভাইকে গালিগালাজ করে বক্তব্য দিতে থাকেন। এতে তিনি ও তার পরিবার ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজন সমাজে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছেন। এ ব্যাপারে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান আসাদ। সংবাদ সম্মেলনে আসাদ তার ও তার পরিবারের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করেন।