ঢিলেকাব্য: একটি পাঠ প্রতিক্রিয়া
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:৫২ মিনিটমো.আব্দুল আজিজ
বছর কয়েক আগে শিলচর গিয়ে ছিলাম। সেখানে সাক্ষাৎ ঘটে একঝাঁক কবির সাথে।এটি ও জানা গেল যে শিলচর নাকি কবির শহর।এদিক দিয়ে আমাদের সিলেটই- বা কম যায় কি সে। সিলেটেও রয়েছেন ঝাঁকে ঝাঁকে তরুণ কবি।একটি সংগঠন তো শুধু কবিদের-‘ পয়েটস ক্লাব’। কবিরা লিখেন কিন্তু বাংলায়- অথচ তাদের সংগঠনের নাম ইংরেজিতে।কেন? জানি না।
সিলেটে যারা কবিতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন,কাব্য চর্চা করেন তাদের অন্যতম আনোয়ার হোসেন মিছবাহ্। তার পরিচয় দিতে গিয়ে আরেক কবি আবিদ ফায়সাল লিখেছেন,” টলটলে এক হৃদয়ের অধিকারী আনোয়ার হোসেন মিছবাহ্। ছোট কাগজের অনিয়মিত সম্পাদক,ব্যাংকার,সংস্কৃতিকর্মী ও মনন ভাবুক- এই তাঁর অন্তিম পরিচয় নয়।তিনি কবি এবং কুড়ি শতকের নয়ের দশকের শুরু থেকে পত্রপত্রিকা ও ছোট কাগজে লিখে চলেছেন।ব্যক্তি স্বভাবের মতোই তাঁর কবিতা- প্রীতিস্নিগ্ধ।” সম্প্রতি তার কাব্যগ্রন্থ ঢিলেকাব্য আমার হাতে এসেছে।গ্রন্থটি সম্পর্কে দু’চার কথা বলার আগে প্রাসঙ্গিক কিছু কথা বলে নিতে চাই।
সংস্কৃতে আছে’ বাক্যং রসাত্মং কাব্যম’ অর্থাৎ রসাত্মক বাক্যই হচ্ছে কাব্য বা কবিতা।রসাত্মক বাক্য পদ্যে বা গদ্যে রচিত হতে পারে।এ অর্থে কবিতা শব্দটি ব্যাপকাকার ধারণ করে।কবিতা বলতে আমরা যে ছন্দবদ্ধ বাক্যকেই বুঝব তা নয়।ছন্দহীন নিরেট গদ্যও কবিতারূপে গণ্য হতে পারে।ইংরেজ কবি কোলরিজের ভাষায় কবিতা হচ্ছে Best words in the best order.অর্থাৎ সুমন্বিত শব্দরাজিই হচ্ছে কবিতা।
আমাদের গদ্য সাহিত্যে এমন কিছু গ্রন্থ আছে যাকে স্বাচ্ছন্দ্যে কবিতা বলে আখ্যায়িত করা চলে।যেমন চন্দ্রশেখর মুখোপাধ্যায়ের ‘উদ্ভ্রান্ত প্রেম,’ রবীন্দ্রনাথের ‘শেষের কবিতা’ বা যাযাবরের ‘দৃষ্টিপাত’।এসব গ্রন্থ পাঠে পাঠক সত্যিকার কাব্যরস উপভোগে আপ্লুত হতে পারেন।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে ঢিলেকাব্যকে কোন পর্যায়ে ফেলব? এ গ্রন্থের অন্তর্গত কবিতাগুলো নিঃসন্দেহে ছন্দবদ্ধ। কিন্তু নতুনত্ব রয়েছে এর আকারে।কবিতাগুলো দ্বিপদী। কাজেই এগুলোকে কোন শ্রেনীভুক্ত করা যাবে তা আমার জানা নেই। রবীন্দ্রনাথের ‘লেখনে’ এ ধরনের কিছু পঙ্ ক্তিমালা রয়েছে- যা দ্বিপদী আবার পংক্তি ভেঙ্গে চতুষ্পদীয়ও করা যায়। ঢিলেকাব্যের পঙ্ ক্তিগুলোকেও সেভাবে সাজানো যেতে পারে। তবে আকারটা এ ক্ষেত্রে মুখ্য নয়- আসল বিবেচ্য এর ভাব। ঢিলেকাব্যের পঙ্ ক্তিমালায় কবির জীবনবোধ, অভিজ্ঞতার নির্যাস ও সূক্ষ্ম রসবোধের প্রকাশ ঘটেছে। মাত্র দুটি লাইনের পরিসরে একটি বড়ো ভাবের প্রকাশ ঘটানো সত্যিকার কবিপ্রতিভার পরিচায়ক। প্রখ্যাত সমালোচক প্রবোধচন্দ্র সেনের মতে,’আসল কবিতার লক্ষণ দুটি- অল্প কথার ব্যঞ্জনায় বৃহৎভাবকে প্রতিফলিত করা আর স্বকালের সীমানা পেরিয়ে ভাবীকালে উত্তরণের ক্ষমতা’।এ উক্তির আলোকে ঢিলেকব্যের কবিতা গুলোকে রসোত্তীর্ণ কবিতা বলে গণ্য করা যায়। ইসমাইল গনি ইমনের রেখাঙ্কন কবিতাগুলোর নান্দনিক সৌকর্য বৃদ্ধি করেছে।
বনসাই প্রকাশন- কর্তৃক প্রকাশিত ৪০ পৃষ্ঠার পরিসরে ১০৮ টি কবিতা সম্বলিত ঢিলেকাব্য গ্রন্থের মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ৬০ টাকা।স্থানীয় প্রকাশনার মান বিবেচনা করলে বইখানার গেট- আপ,অঙ্গসজ্জা উঁচুমানসম্পন্ন হয়েছে বলা যায়। কাব্যরস পিপাসু পাঠকদের দ্বারা বইখানা সমাদৃত হবে- এ প্রত্যাশা করি।
মো.আব্দুল আজিজ
প্রফেসর ও ভাষাসৈনিক