“দ্য ওয়ানম্যান পুলিশ” এস আই আব্দুল আজিজ
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:০১ মিনিটনিজস্ব প্রতিবেদক: বিভিন্ন ভাবে মানবিক কাজ করছেন এসএমপি’র এয়ারপোর্ট থানার “দ্য ওয়ানম্যান পুলিশ” এসআই আব্দুল আজিজ। তার মানবিক কাজে উপকৃত হচ্ছেন মধ্যবিত্ত থেকে হতদরিদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।একজন পুলিশ হয়েও অতি সাধারণ ও অমায়িক ব্যবহারে তিনি হয়ে উঠেছেন এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে অতি আপনজন। মানুষ মানুষের জন্য – এই ধারণাকে ছড়িয়ে দিতেই মানবিক কাজ করছেন এসআই মো: আব্দুল আজিজ। কর্মক্ষেত্রে প্রতিদিনের দায়িত্বের পাশাপাশি করে যাচ্ছেন মানবিক কাজ । সাধ্যমতো অসহায়,অস্বচ্ছল ও সুবিধাবঞ্চিত তথা বিপদেপড়া মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন তিনি।শুরুর গল্প ছিলো আশপাশের অসহায় মানুষের না বলা আর্তনাদ আব্দুল আজিজকে পীড়া দিতো।সে পীড়া থেকেই মানুষের কল্যাণে কাজ করে প্রশান্তি পান তিনি। এখন তার সে সকল মানবিক কাজে আব্দুল আজিজ এর পাশে রয়েছে তার ডিপার্টমেন্ট,ব্যাচমেটসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
২০১৩ সালের ২২ নভেম্বর আউট সাইড ক্যাডেট হিসাবে বাংলাদেশ পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর (এসআই নি:) পদে যোগদান করেন আব্দুল আজিজ । পুলিশে যোগদানের আগে পেশায় তিনি ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। সাধারণ মানুষ থেকে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকতা,ব্যাচমেট,ফেসবুক ফ্রেন্ডস, শুভাকাঙ্খী এখন এসব মানবিক কাজে আব্দুল আজিজকে আর্থিক অনুদান প্রদান করছেন, মানসিকভাবে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছেন।নিজের বেতনের কিয়দংশ এবং প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে কারও খাবারের ব্যবস্থা করছেন,কারও জন্য অস্বচ্ছল পরিবারের উপযুক্ত মেয়েদের বিয়ের খরচ যোগাচ্ছেন। কারো চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন। কারও জন্য রাতের আঁধারে খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছেন ঘরে। কারও ঘর করে দিচ্ছেন।শিক্ষার্থীদের গোপনে আর্থিক অনুদান দিয়ে করছেন সহায়তা।অসংখ্য ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে জামিন করিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন। মহামারী করোনাাকালীন সময়,সিলেটে ভয়াবহ বন্যার সময় খাদ্য সামগ্রী ,ঔষধপত্রসহ আর্থিক সুবিধা পেয়েছে সিলেট সদর উপজেলার ৩নং খাদিমনগর ইউনিয়নের একাধিক গ্রামের সহস্রাধিক অসহায় পরিবার। আব্দুল আজিজ জানান, চাকুরী জীবনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মানবিক কাজ করে আসছেন তিনি। এমন সহস্রাধিক পরিবারের মানুষের সেবা করেছেন।যাদের টাকার জন্য ঠিকমতো চিকিৎসা নিতে পারছেন না, শিক্ষা উপকরণের জন্য শিক্ষা গ্রহণ করতে সমস্যা হচ্ছে এবং উপযুক্ত বয়স হবার পরও যৎসামান্য টাকার জন্য বিবাহ সম্পন্ন করতে যে সকল পরিবারের সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে একদম বিনামূল্যে আইনী সহায়তা প্রদান করাসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপণ,বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ,হতদরিদ্রের গৃহ নির্মাণ ও মেরামত এর পাশাপাশি গণজমায়েতপূর্ণ স্থানে ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গিয়ে জঙ্গিবাদ,উগ্রতা, সন্ত্রাস,বাল্য বিবাহ,মাদক ও যৌতুক প্রতিরোধে সচেতনতামূলক সভা- সেমিনার করছেন। ডজনখানেক ওয়ারেন্টভুক্ত মামলার আসামিদের অন্ধকার জগত থেকে ফিরিয়ে আলোরপথে নিয়ে এসেছেন। যাদের পরিবার মামলায় জর্জরিত থাকায় আগে অশান্তি বিরাজ করতোঃ আজ সেই পরিবারগুলোতে সেই মানুষগুলো অপরাধের জগত থেকে ফিরে আসায় তাদের পরিবারেও শান্তির সুবাতাস বইছে। তাদের ছেলে মেয়েদের আগে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে বখাটে হওয়ার উপক্রম ছিলো,সেই প্রবণতা কাটিয়ে এখন তাদের পরিবারে সুখ শান্তি বিরাজ করছে, ফলে সেসব পরিবারের সন্তানরা নিয়মিত স্কুল কলেজে যাচ্ছে। ছেলে মেয়েরা সুশিক্ষিত হয়ে উঠছে এবং বদলে যাচ্ছে সমাজের চিত্র। মানবিক কাজ শুরু যেভাবে :আব্দুল আজিজ এর বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার ফুলতলা বাজারে । ফুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাঠশালা সম্পন্ন করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন ফুলতলা বশির উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় ও টি এন খানম একাডেমী সরকারী কলেজ জুড়ী থেকে। স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ থেকে। ছাত্রাবস্তাতেই সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও সেবামূলক সংগঠনের সাথে জড়িত থাকায় এলাকায় সুপরিচিত হয়ে উঠেন। শৈশব থেকেই মানুষের বিপদে-আপদে ছুটে যেতেন।২০১৩ সালে আব্দুল আজিজ পুলিশে যোগদান করেন।বর্তমানে তিনি এসএমপি’র এয়ারপোর্ট থানার কালাগুল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা থেকে পরপর তিনবার মানবিক কাজের জন্য তিনি পুরস্কারে ভূষিত হন। পুলিশে যোগ দেওয়ার পর আব্দুল আজিজ এর সমাজসেবার পরিসর আরও বাড়ে। নিজের বেতনের টাকার পাশাপাশি,আত্মীয়-স্বজন,বন্ধুবান্ধব ও দানশীল মানুষের সহযোগিতায় সবকিছু নিয়েই বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান। আব্দুল আজিজ এর মানবিক কাজে মুগ্ধ হয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে ‘দ্য ওয়ানম্যান পুলিশ’ আখ্যা দিয়েছেন। তার এমন মহৎ কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্থানীয় এলাকার শিক্ষিত তরুণরাও এগিয়ে এসেছেন। তারাও তার কাজ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অসহায় মানুষের জন্য নানা সমাজ সেবামূলক সংস্থা গড়ে তুলেছেন। তার সততা ও কর্মোদ্যমে মুগ্ধ ও আশ্বস্ত হয়ে এলাকার লোকজন তাঁর বদলি হওয়ার পরেও এয়ারপোর্ট থানায় অনুষ্ঠিত ওপেন হাউজ ডে ‘তে কমিশনারের নিকট থেকে চেয়ে আব্দুল আজিজকে পুনরায় কালাগুল পুলিশ ক্যাম্পে পোস্টিং করান। সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় চলে আব্দুল আজিজ এর মানবিক সব মানবিক কর্মকাণ্ড। আর্তমানবতার সেবায় মানবিক আব্দুল আজিজ পেয়েছেন বিভিন্ন সংস্থা থেকে নানা সম্মাননা।
শিক্ষার্থী ঝরেপড়া রোধ: শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নত হতে পারেনা। কোন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনা এবং কোন পরিবার সুখি হতে পারে না।তিনি এই উপলব্ধি থেকে বৃহত্তর সাহেবের বাজার ও আশপাশ এলাকার হতদরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থী ঝরেপড়া রোধ করছেন।তাদের অভিভাবকদের বুঝিয়ে শুনিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের স্কুলে ফেরাচ্ছেন।নাম প্রকাশ না করেই নিজের অর্থ আর শ্রম ব্যয় করে শিক্ষার্থী ঝরেপড়া রোধ করছেন তিনি। তার সহযোগিতায় এপর্যন্ত শতাধিক শিক্ষার্থী স্কুল ও কলেজমুখী হয়েছে।ফিরে পেয়েছে তারা নতুন জীবন। একজন অভিভাবক জানান,আমার পরিবার চলেনা,পরিবারের সদস্য বেশী,সে অনুযায়ী উপার্জনের লোক নেই।আমাদের আর্থিক অবস্থা একেবারেই খারাপ। পড়ার খরচ সামলানো মুসকিল। তাই আমার মেয়ে ও ছেলেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেই।ছেলেক