বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টিতে কারা,কে এই আনোয়ারুল ইসলাম?
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ অক্টোবর ২০২২, ১০:৫৭ মিনিটসিলেটএক্সপ্রেস ডেস্ক- রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য গত বুধবার নির্বাচন কমিশনে আবেদন জমা দিয়েছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি)। নিবন্ধনের আবেদনে বিডিপি’র কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কার্যালয় হিসেবে নয়াপল্টনে ১২/৭, চায়না টাওয়ার নামে একটি বহুতল ভবনের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। অফিসের খোঁজে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় উল্লিখিত ঠিকানায়। বিডিপি’র অফিসের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। দলটির অফিস সেখানে আদৌ আছে কিনা জানতে এ সময় কথা হয় ১২/৬-এর আল শামী ওভারসীজ লিমিটেডের এক কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি বলেন, গতকাল হঠাৎ করে ১২/৭ কক্ষটির দরজায় বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি লেখা একটি ব্যানার দেখেছিলাম। ব্যানার দেখে আমরা অবাক হয়ে গেছিলাম। কারণ, তাদের এর আগে কখনো এখানে দেখিনি। তাছাড়া আমরা জানি এখানে তো একটি অনলাইন প্ল্যাটফরমের অফিস রয়েছে। আমরা তাদেরকে দুই-একদিন আগেও রুম ডেকোরেশন করতে দেখেছি। হঠাৎ করে ওনারা কীভাবে অফিস নিলো সেটাই ভাবছিলাম। তাছাড়া এখানে কোনো রাজনৈতিক দলের অফিস ভাড়া দেয়ার কথাও না। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আর ওই ব্যানার দেখা যায়নি বলে জানান তিনি।
পরবর্তীতে অনেক বার দরজাতে কড়া নাড়লেও ১২/৭ নম্বর কক্ষটি একজন খুলে দেন। কক্ষটি বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির অফিস কিনা জানতে চাইলে নাম জানাতে অনিচ্ছুক সেই ব্যক্তি বলেন, ‘না, এটা আমাদের অফিস। অনেকদিন ধরেই এই ঠিকানায় আমাদের অফিস রয়েছে। আমরা ইউটিউব ও ফেসবুক নিয়ে কাজ করি। ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করি। আমাদের অফিসের নাম এনআরবি। এখন আমাদের অফিস ডেকোরেশনের কাজ চলছে। তিনি বলেন, শুনেছিলাম বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি নামের একটি দল এখানে অফিস নিতে চেয়েছিল। কিন্তু, মালিক ওনাদের অফিস দিতে রাজি হননি বলে জেনেছি। এ সময় তিনি ফ্ল্যাট মালিকের কাছে ফোন দিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। মালিকের সঙ্গে কথা বলা শেষে তিনি মানবজমিনকে বলেন, মালিকের সঙ্গে কথা হলোÑতিনি ওই দলকে অফিস ভাড়া দেননি বলে জানিয়েছেন।
তবে, এর আগে অফিসের ঠিকানা জানতে চাইলে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ১২/৭, চায়না টাওয়ার, পুরানা পল্টনে আমাদের অফিস রয়েছে। কিন্তু পুরানা পল্টনে চায়না টাওয়ার নামের কোনো ভবনের অস্তিত্ব নেই জানালে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘না, নয়াপল্টন হবে, পুরানা পল্টন না। তিনি আরও বলেন, আমাদের অফিসিয়াল কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। এখন ডেকোরেশনের কাজ চলমান। পরবর্তীতে অফিসের বিষয়ে জানতে তাকে বার বার ফোন করলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
কে এই আনোয়ারুল ইসলাম?
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম (চান) পেশায় আইনজীবী। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল পৌরসভার চারিআনি পাড়ায়। তিনি ১৯৯০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জহুরুল হক ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদল থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। তার বড় ভাই একেএম রফিকুল ইসলামও বিএনপি’র সৌদি আরব (পূর্বাঞ্চল প্রদেশ) শাখার সভাপতি ছিলেন বলে দাবি করা হয়। আনোয়ারুল ইসলামের ভাবী ফরিদা ইয়াসমিন ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আনোয়ারুল ইসলাম ছাত্রদল থেকে বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে কিছুদিন যুক্ত থাকলেও পরে ঢাকায় আইন পেশায় গিয়ে জামায়াতে যোগ দেন। এর মাঝে কিছু সময় তিনি সৌদি ছিলেন। বর্তমানে তিনি জামায়াতের ঢাকা মহানগর কমিটির মজলিশে শূরার সদস্য বলে জানা গেছে।
নান্দাইল পৌরসভার মেয়র রফিক উদ্দিন ভুঁইয়া মানবজমিনকে বলেন, আনোয়ারুল ইসলাম শুরু থেকেই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ওনার আরেক ভাই শফিকুল ইসলাম সবুজও জামায়াতের রাজনীতি করেন। তবে ওনার বড় ভাই একেএম রফিকুল ইসলাম বিএনপি’র সৌদি আরব (পূর্বাঞ্চল প্রদেশ) শাখার সভাপতি ছিলেন। বাকি ভাইরাও বিএনপি’র রাজনীতি করেন। ওনার ছোট ভাই আজিজুল ইসলাম পিকুল নান্দাইল পৌরসভার মেয়র ছিলেন। ওনার ভাবী নান্নাইল উপজেলা পরিষদে বিএনপি’র চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন।
নান্দাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ জুয়েল বলেন, উনি ছাত্র জীবনে ছাত্রদল করতেন। এরপর তিনি কিছুদিন তার বড় ভাই রফিকের কাছে যান। রফিক সাহেব সৌদি আরবের বড় ব্যবসায়ী। উনি বিএনপি’র রাজনীতি করেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থীর পক্ষে তার ভূমিকা অনেক ছিল। তার ছোট ভাই পিকুল বিএনপি’র মেয়র ছিলেন। তিনবার নির্বাচনে দাঁড়িয়ে দুইবার ফেল করেছিল। তিনি বলেন, গত তিন-চার বছর আগে জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু তার ভাইয়েরা সবাই বিএনপি’র রাজনীতি করে। উনি আবার নতুন করে দল গঠন করলো কেন বুঝলাম না।
নান্দাইল পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শরিফুল ইসলাম ভুঁইয়া মানবজমিনকে বলেন, আনোয়ারুল ইসলাম চান সাহেব বছর তিনেক আগে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। ওনার ভাই রফিকুল ইসলাম সবুজ ও একেএম রফিকুল ইসলাম বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছে। এ ছাড়া ওনার বাবা ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন।
এদিকে বিডিপি’র জেনারেল সেক্রেটারি মুহা. নিজামুল হক ছাত্রশিবিরের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছিলেন বলে জানা গেছে। তিনি ২০১১ সালে শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটিতে দাওয়াহবিষয়ক সম্পাদক হন, পরের কমিটিতে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে আনোয়ারুল ইসলামকে মোবাইলে বার বার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে টেলিফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন ধরলেও কিছু বলতে রাজি হননি। এবং ফোন কেটে দেন।
অবশ্য আনোয়ারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বিডিপি’র সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর কোনো সম্পর্ক নেই। আমিও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নই। আমাদের কার্যনির্বাহী কমিটি ১৫ সদস্যের।
দলটির কমিটিতে অধিকাংশই ছাত্রশিবিরের নেতা: এদিকে একটি সূত্র বলছে, বিডিপি’র আবেদনের সঙ্গে ১৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির তালিকা দেয়া হয়। এ কমিটিকে বিডিপি’র ‘জাতীয় স্থায়ী কমিটি’ বলে উল্লেখ করা হয়। ১৫ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে যারা আছেন, তাদের অধিকাংশই জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো না কোনো পর্যায়ের নেতা ছিলেন। কেউ কেউ পরবর্তী সময়ে জামায়াতের শপথধারী রুকন বা সদস্য হন। তাদের একজন রাশেদুল ইসলাম (রানা) এক কমিটিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক ও পরে ছাত্রকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। আরেকজন রিয়াদ হোসাইন, যিনি একসময় শিবিরের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছিলেন।
জানা গেছে, ইসিতে বিডিপি’র ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ কমিটির পৃথক তালিকাও জমা দেয়া হয়। তাতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি পদে মনির উদ্দিন (মনি) ও সাধারণ সম্পাদক পদে রেজাউল করিমের নাম রয়েছে। মনির উদ্দিন ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) সভাপতি ও পরে কেন্দ্রীয় হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট (এইচআরডি) সম্পাদক ছিলেন। রেজাউল করিমও ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা। সুত্র-মানবজমিন