প্রিন্ট এর তারিখঃ মে ২, ২০২৪, ৪:৪৪ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ১৯, ২০২২, ৯:৫৮ অপরাহ্ণ
২২ বছর পর.,,!
তাসলিমা খানম বীথি :
মুক্তাঙ্গন থেকে বের হতেই চোখ দুটি চলে যায় নরম কাচাপাকা মাটি আর তার উপরে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা সবুজ পাতা গাছগুলো দিকে। অজান্তেই মনে পড়ে ‘পৃথিবী আমার আসল ঠিকানা নয়, মরণ একদিন মুছে দিবে সকল রঙিন পরিচয়!
যাই হোক, সেদিন সকালে ঘরের সবাই যখন ঘুমে। আম্মা ফজর নামাজ পড়ে হাঁটতে বের হয়ে ঘরে ফেরেনি। আমরা তখন ঘুমে চিলাম। আমি নাস্তা সেরে হসপিটালে চলে আসি। কাজের ফাঁকে আমিনা ম্যাসেস - আম্মা তো বাসা নেই। কাউকে কিছু না বলে আম্মা কোথায় যাবেন। কেউ ভাবেনি। যদিও মনে মনে ভেবেছি বড় আপার বাড়িতেই যাবেন। কিছুক্ষণ পর আপার কল- আম্মা তাদের কাছেই আছে। শুধু আম্মার নয় সবারই মন খারাপ। কারন ২২ বছর পর আমরা বাসা বদল করছি। একেই বাসায় দীর্ঘদিন বসবাস। কত ভাড়[াটিয়া আসছে, গেছে। আমরা ছিলাম সবচে পুরনো ভাড়াটিয়া। ভাড়িওয়ালারা সবাই লন্ডনে থাকলেও আমাদের সাথে ছিলো পারিবারিক ভালো সম্পর্ক। ফাইনালি বাসা বিক্রি হয়। তিন মাস হাতে তাকলেও এর মধ্যে সবাই বাসা খোজা শুরু করি। পাশের ফ্ল্যাটের রোকেয়া আপারা বিদায় নেবার সময় আম্মাকে ধরে কি যে কান্না। মনে হচ্ছে বাপের বাড়ি থেকে জামাই বাড়ি যাচ্ছে। আমরা প্রতিবেশিরাও আত্মীয় মতই ছিলাম। এক ঘরের রান্না আরেক ঘরে মানুষের না দিয়ে কেউ খেতো না। নতুন বাসা যাবার আগেই আম্মা অসুস্থ হয়ে পড়ে। ভাড়া দিয়ে তাকলেও নিজেদের মতই ছিলাম। কতশত স্মৃতি। বড় উঠানে কাদা মাটিতে কত সবুজ গাছগাছালি-বেলেবুর, আম, কাঠাল, পেয়ারা, বরই মেহেদি পাতার ইত্যাদি।
২. অনলাইন অফলাইনে নতুন বাসা খোঁজতে গিয়ে অনেক সমস্যাও পড়েছি। শহরে বাসা ভাড়া দিয়ে থাকলে কখনো মনের মত করে বাসা পাওয়া যায় না। । মসজিদের পাশে, মেইন রোডে লাইনের গ্যাস আর নিচতলা আমরা বাসা নিতে হবে। এরকম বাসা পাওয়া খুব কঠিন। তবুও চেষ্টা চলছে। বাসা পেলোও তা হয় না। কিছুদিন পরই আমরা পাশের পাড়াতেই চাহিদামত বাসা পেয়ে যাই। এ যেনো মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। মেইনরোডে বাসার পাশেই মসজিদ, আব্বা নামাজ পড়ার সময় মসজিদে যান। লাইনের গ্যাস নিচতলা। মাস যেতেই আমরা নতুন বাসা ওটি। নতুন বাসাতে কারো মন বসছে না। সবাই চুপচাপ। আমার মামাতো বোন মুনতাহা খেলতে পারে না, তার বন্ধুরা সাথে ভিডিও কলে কথা বলে। পুরনো বাসার প্রতিবেশিরা আমাদের দেখতে নতুন বাসা আসছে। পরান বাসার বিড়াল থাকতো। আম্মা তাকে আনতে চাইলো। সেখানে নেই। তাকে মিস করে। অবশেষে আমাদের নতুন বাসভবন এখন মুক্তাঙ্গন। আকাশ চাঁদ তাঁরা আলো আমাদের রুমে এসে পড়ে। মন খারাপ ভালো হয়ে যায়।
নতুন পাড়ায় বাসা থেকে বের হয়ে সিএনজি ওঠি আবার হসপিটালে ডিউটি শেষে সিএনজি বা রিকশা করে বাসা ফিরার পথে ২২ বছর ধরে যে বাসায যেতাম সেই বাসায় গেইটে কাছে চলে যেতাম। আবার সেখান থেকে হেটে নতুন বাসাতে আসি। গাড়ী থেকে নামার আগে নতুন বাসার কথা ভুলে যেতাম। পাড়ায় ঢুকেই পারিবারিক কবরস্থান পাশ কেটে যেতেই চোখের পলকে জীবনকে কত ছোট মনে হয়। জীবন মৃত্যু এই খেলা ঘরে পৃথিবীময় সৌন্দর্যে কত কিছু ঘটে যায়। চারপাশে কত ভালোবাসা প্রেম, কত সৃষ্টি, কত মায়ার এই জগত সংসার। সবকিছু ক্ষণস্থায়ী। পৃথিবীতে আমরা সবাই ভাড়াটিয়া। মুক্তাঙ্গন ভবনের আমাদের রুমের জানালা দিয়ে মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরগুলো মনে করে দেয় ‘পৃথিবী আমার আসল ঠিকানা নয়!
তাসলিমা খানম বীথি
মুক্তাঙ্গন, সিলেট।
19.10.2022
সম্পাদকঃ আব্দুল বাতিন ফয়সল, সহ-সম্পাদকঃ আব্দুল মুহিত দিদার
অফিসঃ সিলেট সিটি সেন্টার, রুম- ৯০৬ (এ), ৯ম তলা,জিন্দাবাজার, সিলেট।
মোবাইলঃ ০১৭১১৩৩৪৬৪১, ০১৭৩০১২২০৫১
email : syfdianews@gmail.com
Copyright © 2024 Sylhet Express. All rights reserved.