মুতাহ বিয়ে বা কনটাক্ট ম্যারেজ : নিকৃষ্ট জাহিলিয়াত
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ অক্টোবর ২০২২, ১:৩২ মিনিটঅমাবস্যা চৌধুরী—-
আমাদের সিলেটে ইদানিং ‘মুতাহ বিয়ে’ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ইংল্যান্ডে বা অন্য কোনো দেশে যাবার জন্য মূলত এই ধরনের কন্টাক্ট ম্যারেজ অনেক বেশি হচ্ছে। স্পাউস/ডিপেন্ডেন্ট ভিসায় বিয়ে করে বিদেশে যাবে, সেখানে যাবার পর ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবে! অথচ ইসলামে এই ধরনের বিয়ে হারাম। আরবি পরিভাষায় একে মুতাহ বিয়ে বলা হয়। এ ধরনের বিয়েকে কেবল হারামই বলা হয়নি, বরং এ ধরনের বিয়েকে চরম লাঞ্ছনাকর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে সাময়িক সময়ের জন্য এ বিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা নিষিদ্ধ করা হয়। কিয়ামত পর্যন্ত মুতাহ বিয়েকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন মহান আল্লাহ তায়া’লা।
মুতাহ বিবাহ বাতিল। ইসলামি শরিয়াহ’র পরিভাষায় মুতাহ বিয়ে হলোÑ কোনো পুরষ কোনো মহিলাকে বলবে, আমি এত দিনের জন্য এত টাকার বিনিময়ে তোমার কাছ থেকে ফায়দা গ্রহণ করবো (যে কোনো ধরনের ফায়দা হতে পারে, চাই তা শারীরিক, অর্থনৈতিক কিংবা মানসিক)। এরকম বিয়ে শরিয়তে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কেউ যদি অনার্স শেষ করে ইংল্যান্ডে বা অন্য কোনো দেশে মাস্টার্স করতে যেতে চান, তাহলে তিনি তার হাসবেন্ড/ওয়াইফকে সাথে নিতে পারবেন। অর্থাৎ, একজন স্টাডি পারপাসে যাবেন আর অন্যজন স্পাউস হিসেবে। এই সুযোগকে ভিন্নভাবে কাজে লাগাচ্ছেন অনেকেই। যেখানে অনার্স শেষ করা একটা ছেলে কিংবা মেয়ে সবদিক থেকেই বিয়ের জন্য উপযুক্ত সেখানে বিয়ে না করে এইরকম আরেকজনকে সাথে নিয়ে যাওয়া (যিনি হাসবেন্ড/ওয়াইফ সেজে যাবেন তিনি অনেক টাকা অপরপক্ষকে দিবেন) নিকৃষ্ট পর্যায়ের জাহেলিয়াতের অন্তর্ভুক্ত। এ সকল বিয়ের মধ্যে আমাদের পারিবারিক ব্যবস্থাপনা একেবারে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আধুনিক পরিভাষায় একে টাকার বিনিময়ে বেশ্যাবৃত্তি বললেও অত্যুক্তি হবে না। হয়তো এখানে নারী-পুরুষের কোনো মিলন হচ্ছে না শর্তের কারণে, তবে এটার সুদূরপ্রসারী ভয়াবহতা কতটা মারাত্মক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে অনেক দেশ নারী-পুরুষের এ বিয়ে সত্যিকার কিনা তা পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেয়। আর এটিকে বাস্তবায়ন করার জন্য নারী-পুরুষ শারীরিক মিলন করতে বাধ্য হয়। আধুনিক পরিভাষায় একে বেশ্যাবৃত্তি বলতেই হয়। আর এই রকম পরিস্থিতির কারণে যারা সত্যিকার অর্থে স্বামী-স্ত্রী তাদের জন্যও অনেক সময় ভোগান্তি কিংবা নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এসকল বিয়ে আমাদের তরুণ সমাজকে বেহায়াপনা, অশ্লীলতা আর নোংরামির দিকে আরো বেশি পরিমাণে ধাবিত করবে। শুধু তাই নয়, এরকম একটি চিন্তাধারা আমাদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে, যা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অশনি সংকেত। অভিভাবকদেরকে এ ব্যাপারে এখনই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এরকম মনোভাব থেকে আইএলটিএস কিংবা ইংরেজি শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোতে কী পরিমাণ নোংরামি আর লজ্জাহীনতা ছড়িয়ে পড়ছেÑতা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কন্টাক্ট ম্যারেজ সত্যিকার অর্থে একটি আন্তর্জাতিক প্রতারণা। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশ এবং ভিসা সংক্রান্ত কর্তৃপক্ষের সাথে প্রতারণা করা হয়। যেখানে একজন মেয়ের বিয়েই হয়নি অথবা ওই মেয়ের স্বামী প্রবাসে অবস্থান করছেন, যেখানে তিনি যেতে চান; অথচ তিনি একজন পুরুষকে তার স্বামী পরিচয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তা কত বড় রকমের প্রতারণা বলার অপেক্ষা রাখে না। আবার যিনি স্বামী হিসেবে যাচ্ছেন, তিনিও কতটা প্রতারণা বা কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন, তা সহজেই অনুমেয়! এরকম অবস্থায় তার অর্জিত টাকা-পয়সা কিংবা সম্পদ চিরদিনই হারাম থেকে যাবে! এই হারাম যতদিন শরীরে থাকবে, ততদিন তার কোনো ইবাদাতই কবুল হবে না। এর চেয়ে ভয়ংকর শাস্তি আর কী হতে পারে? প্রতারণার শাস্তি জাহান্নাম ছাড়া আর কী হতে পারে!
দুনিয়ার মোহে পড়ে আমাদের ক্বলব কতটুকু নষ্ট হয়ে গেছে কল্পনা করা যায়? আমাদেরকে চিন্তা করতে হবেÑআমাদের দুনিয়ার জীবনকে নিয়ে! কত বছর বাঁচবো আমরা? বড়জোর আশি থেকে একশত বছর হয়তো বাঁচবো। তারপর কোথায় যাবো আমরা? আমরা কি মিলিয়ে যাবো শূন্যতায়? না, আমাদেরকে অবশ্যই মহান রবের কাছে ফিরে যেতে হবে। কিয়ামতের কঠিন ময়দানে আমাদের দুনিয়ার জীবনের হিসাব দিতে হবে। আমাদের কর্মফলই জান্নাত-জাহান্নাম নির্ধারণ করবে! তাই আজকে যারা সামান্য দুনিয়ার স্বার্থে নিজেদের ঈমান-আমল এবং নৈতিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন, তাদেরকে অবশ্যই কিয়ামতের দিন অবশ্যই আল্লাহর কাঠগড়ায়