বাস ড্রাইভারের সদয়
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ৯:০৭ মিনিট
তাইসির মাহমুদ :
ডেগেনহ্যামে ঘরের পাশেই বাস স্টপ। অনেক দিন পর বাসে চড়লাম। অবশ্য ড্রাইভিং শেখার আগে বাস এবং ট্রেনই ছিলো চলাচলে একমাত্র ভরসা।
বাসে ওঠে যখন ভাড়া পরিশোধ করতে ওয়েস্টার কার্ড টাস করতে গেলাম, ড্রাইভার আমাকে ইশারা দিয়ে পেছনে গিয়ে বসতে বললেন। বললাম, ওয়েস্টার টাস করতে হবে না? তিনি মাথা নেড়ে ‘না’ সুচক জবাব দিলেন ।
আমি ওয়েস্টার কার্ড টাস না করে একটি সীটে গিয়ে বসলাম। কিন্তু শ্বেতাঙ্গ এই ড্রাইভার আমার প্রতি কেন এত সদয় বুঝে ওঠতে পারছিলাম না। পরে বুঝলাম, রানীর মৃত্যূতে দেশব্যাপী যে ১৪দিনের জাতিয় শোক চলছে, এ কারণেই হয়তোবা যাত্রীদের প্রতি তিনি কিছুটা সদয়।
আমার গন্তব্য ডেগেনহ্যাম টিউব স্টেশনের লাগোয়া বাস স্টপ । মধ্য খানে মাত্র তিনটি স্টপ পাড়ি দিতে হবে। শেষ স্টপে পৌঁছার আগে প্রচণ্ড যানজটে আটকা পড়লাম । বাস আর এগুচ্ছে না। অথচ বাস থেকে নেমে হেঁটে গেলে অনেক আগে স্টেশন পৌঁছে যাবো। কিন্তু সামনের স্টপেজে পৌঁছার আগে ড্রাইভার যে কিছুতেই দরজা খুলবেন না তাও ভালো করে জানি । বিরক্ত মনে বসে আছি। ৪৬ সীটের দু’তলা বাসে আমিই একমাত্র যাত্রী । ভাবলাম, ড্রাইভারকে অনুরোধ করে দেখি, যদি তিনি দয়া পরবশ দরজা খুলে দেন তাহলে নেমে পড়বো।
সীট থেকে উঠে গিয়ে গ্লাসবেস্টিত ড্রাইভার-রুমের পাশে দাঁড়ালাম। বললাম, এতো যানজটের মধ্যে সামনের স্টপে পৌঁছতে তো কমপক্ষে দশ মিনিট সময় লাগবে । আমাকে কি এখানে নামার সুযোগ দেয়া যায় না? ড্রাইভারের জবাব- ‘স্যরি স্যার, আই কান্ট’ ।
নিরুপায় হয়ে সীটে ফিরে এলাম। চরম বিরক্তি নিয়ে বসে আছি । কারো কিছু করার নেই। ড্রাইভারকেও দোষারূপ করে লাভ নেই। আমার জন্য তো বেছারা আইন ভঙ্গ করতে পারেনা। কথাগুলো যখন ভাবছিলাম- হঠাৎ তিনি ড্রাইভার সীট থেকে এক্সকিউজমি বলে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। আমি তৎক্ষনাত ওঠে যেতেই বললেন, আপনার কি খুব তাড়া? বললাম, ইয়েস খুবই তাড়া। আমাকে এখানে নামার সুযোগ দিলে খুব উপকৃত হবো।
বললেন, আমি বাস স্টপে পৌঁছার আগে দরজা খুলতে পারবো না । এটা বেআইনি। আইন ভঙ্গ করলে আমার জরিমানাও হতে পারে । এরপর আমাকে চোখ ইশারা করলেন বহির্গমন দরজার উপরের ইমার্জেন্সি লাল বার্টনটির দিকে। যে বার্টনে টিপ দিলে এমনিতেই দরজা খুলে যায়। দরজাটি ড্রাইভারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আমি তাকে একটি বড় থ্যাংস দিয়ে লাল ইমাজেন্সি বাটনটিতে চাপ দিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম।
হাঁটতে হাঁটতে ভাবলাম, একজন বাস-ড্রাইভার কত সচেতন আর আইনের প্রতি কত শ্রদ্ধাশীল।নিজে আইন ভঙ্গ করলেন না। অথচ আমাকে বেরিয়ে আসার পথ বাতলে দিলেন। কারণ আইন ভঙ্গ করার কারণে তাঁর চাকরিতে অসুবিধা হতে পারে। তবে যাত্রী হিসেবে আমার তেমন অসুবিধা হবে না। কারণ ইমার্জেন্সি অবস্থায় একজন যাত্রী যাতে বেরিয়ে আসতে পারে সে জন্য তো লাল বার্টনটি রাখাই হয়েছে।
ডেগেনহ্যাম।
লন্ডন, যুক্তরাজ্য
রোববার, ১১ সেপ্টেম্বর