ঘুরতে ঘুরতে ইউরোপ- স্বপ্নের প্যারিস
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ৮:৫৭ মিনিট
মিলু কাশেম :
বৃষ্টিস্নাত রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে আমরা চলে এলাম সিন নদীর তীরে।নদী তীরের ম্যাপল চেষ্টনাট গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ছে।ঝরে পড়া পাতার ওপর দিয়ে হেটে চলেছি আমরা।পাশে অপূর্ব সুন্দর সিন নদী।নদীর দুই তীর বাঁধানো,এত সুন্দর করে সাজানো গোছানো,যেন নদীর কারনে প্যারিসের সৌন্দর্য আরও বেড়ে গেছে।
প্যারিসে সিন,ডুসেলড্রফ কোলনে রাইন,
ফ্রাঙ্কফুর্টে মাইন,প্রাগে ভ্লাতুবা,বুদাপেস্টে
ডোনাও (দানিয়ুব) দেখে আমার ঢাকার বুড়িগঙ্গা,চিটাগাংয়ের কর্ণফুলি,রাজশাহীর পদ্মা,আমার প্রিয় শহর সিলেটের সুরমা’র কথা মনে পড়ে।
এসব নদীকে ঘিরে পরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠতে পারতো আমাদের শহরগুলোও।
এরপর আমরা হাটতে হাটতে গেলাম সিন নদীর অপর পাড়ে বিখ্যাত নটরডেম গীর্জায়।এক অপূর্ব সুন্দর স্থাপত্যকলার নিদর্শন এটি। প্যারিসের ইতিহাসের সাথে নটরডামের নাম অঙ্গাঅঙ্গী ভাবে জড়িয়ে আছে।নটরডাম দেখে আমার মনে পড়ে গেল ছেলেবেলায় পড়া ভিক্টর হুগোর”হ্যাঞ্চ ব্যাক অব নটরডাম” এর কথা।
প্যারিসে আজই আমাদের শেষ দিন।তাই
সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরলাম, প্যারিসের অভিজাত
ধনী এলাকা এভিন্যু দ্যা প্রেসিডেন্ট উইলসন,প্যারিসের ক্রাইম জোন হিসাবে চিহ্নিত খারাপ এলাকা সানদানি, বাংলাদেশীদের আবাসস্থল হিসাবে পরিচিত রিপাবলিক এলাকায়।সানদানিতে প্রচুর কালো লোকের বাস।চুরি ডাকাতি ছিনতাই খুন রাহাজানি, মাদক ব্যবসার আস্তানা হিসাবে চিহ্নিত।
রাস্তায় গাড়ী পার্ক করে গেলে মুহুর্তের মধ্যে চাকা খুলে নেয়া কিংবা গ্লাস ভেঙে রেডিও টেপরেকর্ডার সহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি খুলে নেয়ার ঘটনা ঘটে অহরহ।সুযোগ মতো গাড়ী নিয়ে চম্পট দেয় সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র।আর এসব কাজে সাধারনত আফ্রিকান অভিবাসীরাই জড়িত।কিছু সংখ্যক ভারতীয় পাকিস্তানি
ও শ্রীলংকান ও বসবাস করে সানদানি এলাকায়।
আর্জেন্টাইয়ে মাহমুদ ভাইয়ের বাসায় ফেরার পথে পাম্পে পেট্রোল নিতে গিয়ে ঘটলো এক মজার ঘটনা। পাম্পে প্রচন্ড ভিড়,অনেক গাড়ী লাইন ধরে ঢুকছে।আমরা লাইনে দাড়িয়ে অগ্রসর হচ্ছি প্রেট্রোল নিতে।আমাদের BMW গাড়ীর জন্য প্রয়োজন সুপার বেনজিন (অকটেন)।কিন্তু এই পাম্পে অকটেন নেই।
পাম্পের রিসিপসনিস্ট মেয়েটি লাইনে দাঁড়ানে আমাদের গাড়ী দেখে ফরাসি ভাষায় বার বার আমাদের উদ্দেশ্যে মাইকে ঘোষনা দিচ্ছে, তাদের পাম্পে অকটেন নেই,আমরা যেন লাইন ছেড়ে পরবর্তী পাম্পে চলে যাই।কিন্তু আমরা ফরাসি ভাষা না বুঝে লাইনে দাঁড়িয়েই আছি।মাইকের ঘোষনা শুনে লাইনে দাঁড়ানে ও এই রাস্তা দিয়ে অতিক্রমকারী
সবাই আমাদেরকে দেখছে আর হর্ণ দিচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্যে।বার বার হর্ণ শুনে আমরা অনুমান করছিলাম কিছু একটা ঘটেছে।শেষে জার্মানির গাড়ী দেখে জার্মান ভাষাজানা এক ফরাসি তরুণী তার গাড়ী থেকে এসে আমাদেরকে জার্মান ভাষায় বিষয়টি বুঝিয়ে বললে আমরা তাকে ধন্যবাদ দিয়ে লাইন ছেড়ে
অন্য পাম্পে চলে যাই।
ঘরে ফিরে দেখি মাহমুদ ভাই রাতের খাবারের বিশাল আয়োজন করেছেন আমাদের ফিরে যাওয়া উপলক্ষে।প্যারিস প্রবাসী আরও কয়েকজন পাকিস্তানি বন্ধু এসেছেন আমাদের সংবাদ শুনে।
একসাথে সবাই মিলে নৈশভোজ করলাম।
চলে যাব তাই রাতে চেষ্টা করেও ঘুমুতে পারলাম।সারারাত চোখে ভাসলো প্যারিসের নানা দৃশ্য,মনে পড়লো নানা স্মৃতি।স্বপ্নের প্যারিসকে ছেড়ে যেতে হবে ভাবতেই কষ্ট হচ্ছিল।
ভোর ছয়টায় আমরা গাড়ীতে চড়লাম।
মাহমুদ ভাই নীচে এসে আমাদের বিদায়
জানালেন।আজহার গাড়ীতে স্টার্ট দিলো।
মোহনীয় প্যারিসের অগনিত স্মৃতির পাহাড় সঙ্গে নিয়ে আমাদের BMW এগিয়ে চললো জার্মানির উদ্দেশ্যে, ফ্রান্স বেলজিয়াম সীমান্ত অভিমুখে।