পিয়াইন তটের জাফলং
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ৯:৩২ মিনিট
সিলেট মহানগরী ছেড়ে বাষট্টি কিলোমিটার দূরের একটা হিলি জনপদ জাফলং। নব্বই মিনিটের পথ।যাওয়ার পথে পরতে পরতে শিহরণ মাখা আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু সড়ক মনকে খানিক উতলা করে তোলে। ডানে বায়ে ধুধু সবুজ প্রান্তর, খাল-বিল-নালা। জাল দিয়ে মাছ শিকারের দৃশ্যও বড় মধুর লাগে। দূরে সুপারি নারকেল কলাগাছের আড়ালে দেখা যায় ছোট ছোট গাঁ যেন জেগে ওঠা চরে একেকটা দ্বিপ। ক্যামন এক ধরণের বিস্ময় আঁকা অদ্ভুত ভাল লাগা। হরিপুর বাজার ছেড়ে হেমু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাড়ি দিলেই চোখে ভেসে ওঠে সামনে ধোঁয়ায় মোড়ানো বিরাট এক ক্যানভাস। মেঘালয়ের উঁচুনিচু পাহাড়। পাহাড়তো নয় যেন জাত কোন শিল্পীর পটে আঁকা ছবি। মুহূর্তে ওলটপালট হয়ে ওঠে মন। একটা ঘোর পাকে।

জাফলং নামটি উদ্ভিদজাত কোন মশলা শ্রেণীর লাগলেও আদতে মশলার সাথে এর কোন আত্নীয়তার ছিটেফোঁটাও নেই। জাফলংয়ের প্রসিদ্ধি মূলত পাথরে। ছোট-বড় সিকি-আধুলি সব আকৃতির পাথর দেখা যায় এখানে। তবু নামটি শুনলে কেমন যেন লংকা হলুদের একটা ঘ্রাণ নাক ছুঁয়ে যায়। আদুরে ডাক প্রকৃতিকন্যা। এখানে পাহাড় থেকে ঝর্ণা নামে, ভারতের ডাউকি বাজারের ঝুলন্ত সেতু কাছ থেকে দেখা যায় আর মেঘালয়ের পাহাড়গুলো যেন দূর থেকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। পাহাড়ের গায়ে অদ্ভুতভাবে সাজানো ছোট ছোট ঘরগুলো দেখলে মন ছোটে যায় ওই পাহাড়ি পল্লিতে। প্রকৃতির উজাড় করে ঢেলে দেয়া সবুজ বৃক্ষরাজি, পাহাড়ি বেয়াড়া ঢলে নেমে আসা পাথর-পলি-বালু, আঁকাবাঁকা পিয়াইন নদীর হিমেল ফটিক জল সব মিলিয়ে প্রকৃতির এ এক যেন সাজানো বাগান। যেখানে দাঁড়িয়ে স্রষ্টার মহিমা ভিন্নরূপে অনুভব করা যায়। হিমালয় থেকে সৃষ্ট মারি নদী এবং খাসিয়া পাহাড়ের নিম্নভূমিতে সমুদ্রের নাভি ফুঁড়ে ওঠে আসা মারমেইডের মতো যেন জাফলং দাঁড়িয়ে। এখান থেকেই বিশ্বখ্যাত পিয়াইন নদীর যাত্রা। মারী নদীর প্রবল স্রোত টনে টনে পাথর নামিয়ে দেয় এ নদীতে। নদীর বুক ফুলে ফেঁপে ওঠে পাথরে। স্থরে স্থরে নানান রঙয়ের পাথরের স্তুপ যেন ড্রইং রুমে সাজিয়ে রাখার একেকটি শোপিস। বিশ্বাস করুন মন ভরে ওঠে। এই পাথরে পড়ে ব্যবসায়ীদের ঈগল চোখ। সারা দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা আসতে থাকে। ব্যবসার নামে চলে প্রকৃতি বিনাশের মহোৎসব। পাথর আহরণ করতে গিয়ে তার বুকে শ্রমিকের কুড়াল খুন্তির তাণ্ডব আর হনহনিয়ে ট্রাকের ছোটাছুটি বিনাশ ডেকে আনে পাহাড়ি কন্যার। হারতে থাকে তার জৌলুস।

বেশ কিছু বছর পর আবার জাফলং দেখতে আসা। এর আগে বার কয়েক এখানে এসেছি। পাড়ার ক্লাবের সাথেই ছিলো সে ভ্রমনগুলো। পাড়ায় পাড়ায় তখন বিভিন্ন নামে ক্লাব ছিলো। সারা বছর খেলাধুলা নিয়েই ব্যস্ত থাকতো ক্লাবগুলো। বছর শেষে স্কুল পরীক্ষার পরে বসত স্পোর্টস ডে আর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। সে কি আনন্দ। কোন একটা ইভেন্টে পুরস্কার পেয়ে গেলে সে আনন্দ হয়ে যেতো দ্বিগুণ। কোন কোন বছর হতো পিকনিকের আয়োজন। আমাদের ক্লাবটির নাম জাগরণী বয়েজ ক্লাব। এই ক্লাবের আয়োজনেই প্রথম জাফলং দেখা। আজ এই মাটিতে পা ফেলতেই মধুর এক স্মৃতি আমার ভেতর নাড়া দিয়ে ওঠে। একাশি সালের। জাগরণী ক্লাবটি হয়ে উঠলো জাগরণী শিল্পীগোষ্ঠী। একটি ব্যান্ড দল। দলটির ছিলো আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা, ছিলো তরুণদের ক্রেজ। সেই ক্রেজ সিলেটের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছিলো। দলের সব সদস্যদের বয়স আঠারোর কোঠায়। পুরো দল নিয়ে জাফলংয়ে একটা প্রোগ্রাম করার প্ল্যান করি। যেই ভাবা সেই কাজ। কোথায় করবো কিভাবে করবো এগুলোর কঠিন হিসেব-নিকেশ মাথায় না রেখেই মিউজিকের সব ইন্সট্রুমেন্ট সাথে নিয়ে জাফলং যাই। শীতের মরসুম। সবার গায়ে মোটা কাপড়ের জ্যাকেট, মাথায় মাঙ্কি ক্যাপ। বল্লাঘাট পর্যটকে গিজ গিজ করছে। ওখানে ইট সিমেন্টের তৈরি স্টেজের মতো গোল একটা জায়গা খুঁজে পাই। আর তাতেই মঞ্চ বানিয়ে বসিয়ে দিই গানের আসর। শাহিন আর আমি ‘বেড়াতে জাফলং যাব, যাব পাহাড়ের দেশে’ গানটি যখন মাইকে ধরি বেড়াতে আসা পর্যটক সব ষ্টেজের সামনে জড়ো হতে থাকে। একে একে অনেকগুলো গান করি। সন্ধা ঘনিয়ে এলেও দর্শকদের চাওয়ার যেন শেষ হয় না। অনেক কষ্টে সেদিন অনুষ্ঠান ভেঙ্গেছিলাম। কিন্তু সেদিন দর্শকদের ভালবাসার মধ্য দিয়ে যে বিদায়টি নিতে হয়েছিলো আজো তার ছোঁয়া প্রাণে বাঁজে। এবার গ্রীষ্ম। বর্ষাকালে নাকি শাপের খোলসের মতো জাফলং তার রুপ বদলায়। সদ্য যৌবনা কিশোরীর বেশে রুপ আর সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয় প্রকৃতির উদাসী চরে। এ রুপে প্রচণ্ড রকমের মুগ্ধ হয় ভিনদেশীরা। দেশের সব পর্যটন এলাকাতেই তাদের দেখা মেলে। কিন্তু বিদেশে থাকা এ প্রজন্মের বাংলাদেশি তরুণ তরুণীরা নিজ ভূমে খুব একটা আসতে চায় না। বেড়াতে পছন্দের জায়গা খুঁজে মরক্কো গ্রিস তুরস্ক কিংবা দুবাই। পিতৃভূমিতে এমন মন কাড়া জায়গা ওরা জানেইনা। “এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।” এবার জমান তাদের পাঁচ তরুণ তরুণীকে পিতৃভূমির চেহারা ওদের হৃদয়ে এঁকে দিতে মাস কয়েক আগে কেটেছে বিমানের রিটার্ন টিকিট। সময় যত ঘনায় দেশে আসার সম্ভাবনা ততই ফিকে হয়ে আসে। ঝড়-তুফান-বন্যা সাথে ইলেক্ট্রিসিটির এই আছে এই নাই খেলা। সব শঙ্কা মাথায় নিয়েই জুলাই মাসের শেষ দিনে ওরা দেশে আসে। জমান রুপুর হাজব্যান্ড। রুপু আমার শ্যালিকা। লন্ডনের কেন্ট শহরে ওরা থাকে। সাত জনের টিম নিয়ে এবার দেশে। ছেলে তাহলিল মেয়ে দুটো ইনাইয়া আর ইশরা। দেবরের দুই ছেলে তাকবীর আর তাহের। বিশ একুশে বয়স সবার। আঠারো উনিশ বছরে দেশে আসা। দেশ সম্পর্কে ওদের ধারণা খুব সীমিত। অনেক কেচ্ছা কাহিনী শুনে কিন্তু ব্যস্ত জীবনে এগুলো নিয়ে ভাবার সময় খুব একটা থাকে না। জাফলংয়ের গল্প শুনেছে অনেক তাই এবার নিজের ঝুলিতে ভরে নিতে চায় ছুঁয়ে দেখার আমেজ। মেঘের তর্জনী উঁচিয়ে ধমক, আকাশের অশনি সংকেত সব মাথায় নিয়েই সকাল সাড়ে এগারোটায় আমরা জাফলং রওয়ানা দিই। দেড় ঘন্টা ড্রাইভে বল্লাঘাটে যখন পৌঁছি দুপুর একটা। গাড়ি থেকে নেমে এখানকার নিস্তব্ধতা আমাকে বড় অবাক করে। পাথরের দেশে আমার চোখ যেন পাথর হয়ে যায়। আগের দেখা সারি সারি ট্রাক ত্রস্ত শ্রমিকের ছুটে চলা ব্যবসায়ীদের আনাগোনা কিছুই চোখে পড়ে না। আগের জঞ্জালওয়ালা জাফলং এখন আর নেই। লোকজনের মুখে শুনি চার বছর পাথর তোলা বন্ধ। ফলে ট্রাকের ঘটঘটানি, শ্রমিক ব্যাপারীদের লম্ফঝম্প দেখা যায় না। বল্লাঘাটে নামতেই প্যাকেজ ট্যুরের কয়েকজন এজেন্ট আর চিত্রগ্রাহক ঘিরে ধরে আমাদের সহচর হতে। ভ্রমণ স্পটগুলো ঘুরে দেখাবে, ছবি তুলে দেবে। এখানকার কোন দিকে কি আছে ভাল করে জানিনা। একজন গাইড সাথে থাকলে মন্দ হয় না, ঘুরে দেখাটা সহজ হয়। আজকাল আলাদা কোন ক্যামেরাম্যানের দরকার হয় না। প্রত্যেকের হাতে মোবাইল। ইচ্ছেমতো ছবি তোলা যায়। তবে ছবি ওঠাতে গিয়ে নিজের ছবিটা সবসময় ক্যামেরার পেছনে রয়ে যায়। বঞ্চিত হতে হয় অনেক সোনালি মূহুর্ত থেকে। এসব ভাবনা তরুণ ক্যামেরাম্যানটিকে সাথে নিতে আমাদের আগ্রহী করে তোলে। ওদের সাথে একটা চুক্তি করি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও কিন্তু এটা একটা শিল্প হিসেবে বেশ দাঁড়িয়ে গেছে। আমাদের দেশে এর তেমন বিকাশ হয়নি। একটু সুযোগ পেলে আপন মর্যাদায় এ শিল্প এখানেও গড়ে উঠতে পারে। আমাদের একটু খেয়ালে উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে কিছু পরিবার, কিছু মানুষের মুখ। “বল কি তোমার ক্ষতি জীবনের অথৈ নদী,পার হয় তোমাকে ধরে দূর্বল মানুষ যদি।” স্মার্ট গাইড দেলওয়ার আর চার পকেটওয়ালা গোয়েন্দা জ্যাকেট পরা হাসানের নৌকায় গিয়ে উঠি। নৌকা ছুঁটে জিরো পয়েন্টের দিকে। এতক্ষণ প্রচণ্ড গরম আর লু হাওয়ায় যে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা পিয়াইন নদীর হিমেল বাতাস স্বস্তি ফিরিয়ে দেয় নৌকা ভাসার সাথে সাথে। জিরো পয়েন্টে বিশ পঁচিশ মিনিটের যাত্রা। জায়গায় জায়গায় পাথরের ঢেরি। স্বচ্ছ নির্মল পানির নিচে একুরিয়ামের মতো মাছের ছোটাছুটি দেখা যায়। নৌকায় বসে দু’ধারের বৈচিত্র্য দেখতে দেখতে গন্তব্যে এসে পৌঁছি। নৌকা নোঙ্গর করার কোন ঘাট এখানে নেই। পানির নীচে ডুবে থাকা বড় বড় পাথরে পা ফেলে পারে উঠতে হয়। তরুণ ছেলেগুলো লাফ দিতে দিতে নেমে পড়ে। মেয়েগুলোর সাহায্যে আমি একটু আগাই। ইনাইয়াকে নামাতে যেয়ে আমার শরীরের ব্যালেন্স হারিয়ে পানিতে সম্পূর্ণ ডুবে যাই। রিজভী সাকিব সাঈদ আমাকে উদ্বারে দৌড়ে আসে। ততোক্ষণে আমার ওয়ালেট ঘড়ি মোবাইল সব পানিতে ভিজে যায়।পাওয়ার চশমাটা আর ফিরে পাইনি। ভিজা টিশার্টটি খুলে একটা বড় পাথরের পিঠে শুকাতে দিতে যেয়ে বামে চোখ ফেলে দেখি অর্ধেক পানিতে ডুবানো বড় একটা পাথরের ওপর চোখে রোদ চশমা মাথায় বেতের হেট প্রিন্টেড টপসের সাথে কমলা রংয়ের সালোয়ার পরা রুপু বসে নায়িকাদের মতো ক্যামেরায় পোজ দেয়। পেছনে জমান পানির ভেতর থেকে ওঠে আসে। উদলা গা, হাটুর ওপরে চেক লুঙি, মাথায় কাউবয় হেট অনেকটা খাসিয়াদের আদলে ক্যামেরায় ঢুকতে চাইলে নায়িকার আপত্তি উঠে। একটু দূরে দাঁড়িয়ে রোজি ভাবি, লিসা, আমার জায়া ফাহমিদা মেয়ে হৃদি ক্যামেরায় পোজ দেয়ার জন্য চিৎকার শুরু করলে ছবি ওঠে। ছবিটা কিন্তু মোটেই খারাপ হয়নি।
এবার নৌকা ছুঁটে আরেক স্পটের দিকে। সংগ্রামপুঞ্জি মায়াবী ঝর্ণায়। দশ মিনিট নৌকা চালিয়ে মাঝি আমাদের নামিয়ে দেয় এক মরু প্রান্তরে। বালুর মরুপথে হাটতে হয় পনেরো বিশ মিনিট। যেতে যেতে মরুর বুকে দেখা যায় সৈকত ছাতার নীচে প্যান্ডেল বানিয়ে হরেক রকমের অস্থায়ী দোকান। এসব দোকানে খাবার বিক্রি হয়, খেলনাপাতি সাবান কসমেটিকস কাপড়-চোপড় সবই মেলে। পাথরে কুদাই করার দোকান দেখে ঢুকে পড়ে তাকবীর আর তারেক। মা-বাবার নাম পাথরে কুদাই করিয়ে সুভেনীর হিসেবে নিয়ে যায়। এরপর হাটা শুরু করলে একটু দূরে দেখা মেলে মায়াবী ঝর্ণার। এটি ভারত সীমান্তে। এখানে পাহাড়ের সবুজ ঝোপের ভেতর দিয়ে বেশ কয়েকটি ধারায় বিশাল বিশাল পাথর খন্ডের বুক গড়িয়ে পানি নামে,দুধের মতো সাদা পানি। মনে হয় যেন ছুটছে দুধের নহর। একটু খানিক দূর থেকেই ঝর্ণার পানির রিনিঝিনি শব্দ কানে ছন্দ তোলে। মনে হয় যেন কোন অপ্সরীর নৃত্য। পাথর খন্ডের ভেতর দিয়ে একটি সুড়ঙ্গ পথ রয়েছে। কিছু অংশ নজরে আসে বাকিটা অন্ধকার বিদিশার নিশা। ঝর্ণার পানিতে নীচে সৃষ্টি হয়েছে ছোটখাটো এক পুকুর। সেই পুকুরের জলে আমাদের দলের কনিষ্ঠ দুই সদস্য নাবিহা আর ইসরা আনন্দে রীতিমত সাঁতার কাটে। বিলেত থেকে আসা তিন তরুণ তাহলিল তারেক তাকবীর আর দেশীয় তিন তরুণ রিজভী সাকিব সাঈদ ঝর্ণার অর্ধেক পথ বেয়ে উঠলে নীচ থেকে আমাদের পীড়াপীড়িতে আর এগোয়নি। ওখানে বসেই পানির সাথে খেলা করে অনেকটা সময়।
সূর্য পশ্চিমাকাশের দিকে হেলে পড়ছে। বালুর সেই মরুপথ পাড়ি দিতে হবে আবার। হেটে গিয়ে নৌকায় উঠি। মাঝি পাঁচ মিনিটে পার করে দেয় নদী। পারে টমটম অপেক্ষায় আছে প্যাসেঞ্জারের। আমরা উঠে বসি। ভ্রমনের শেষ আইটেম খাসিয়াদের রাজবাড়ি দর্শন। স্থানীয়রা বলে ‘মন্দিরের জুম’। এটি আসলে খাসিয়াদের গৌরবজনক প্রাচীন মালনিয়াং রাজ্যের রাজবাড়ী। এ রাজবাড়িটি প্রায় সাত শতাধিক বছরের পুরনো। প্রাচীন আমলের অনেক ধ্বংসাবশেষ এখনও সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে এখানে। হাজার বছরের পুরনো খাসিয়াদের ঐতিহাসিক ‘মালনিয়াং রাজ্য’-র রাজধানী ছিল জাফলংয়ের বল্লাপুঞ্জি আর এ রাজবাড়ী থেকেই প্রভাবশালী মালনিয়াং রাজারা বিশাল রাজ্য শাসন করতেন। রাজবাড়ি যাওয়ার পথে দু’দিকে পানের বরজ (পানের খেত) । খাসিয়াদের আয়ের প্রধান উৎস। মাঝখান দিয়ে সাটিন ফিতার মতো শুয়ে আছে আঁকাবাঁকা সরু পথ। ছিমছাম পরিষ্কার। ওই রাস্তা দিয়ে টমটম ছুটে রাজবাড়ির দিকে। ওখানে পৌঁছি যখন আকাশ তার বুকে কালো সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে দিয়েছে। বেশি কাছে আর এগুতে পারিনি। আবছা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে রাজবাড়ির গন্ধ শুঁকি। সারাদিনে সবাই ক্লান্ত-ক্ষুধার্থ। বিলম্ব আর বাড়াইনা। সিলেটের এক রেস্টুরেন্টে খাবারের যোগাড় আছে। আপাতত ক্ষুধার জ্বালা সামলে শহরের পথে গাড়ি ছাড়ি।