সিলেটে প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠন সমূহের সংহতি সমাবেশ
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ আগস্ট ২০২২, ৩:১৫ মিনিটচা শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি ৩০০ টাকা করার আন্দোলনের সাথে পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করে সিলেটের প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল সমুহের উদ্যোগে সিলেটে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) বিকেল ৫ টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সংহতি সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিপিবি সিলেট জেলার সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বেদানন্দ ভট্টাচার্য।
বাসদ জেলা সদস্য প্রণব জ্যোতি পাল এর সঞ্চালনায় সংহতি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাসদ জেলা সভাপতি লোকমান আহমেদ, সিপিবি জেলা সভাপতি সৈয়দ ফরহাদ হোসেন, সুজন সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টি জেলা সভাপতি সিকান্দর আলী, বাসদ জেলা সমন্বয়ক আবু জাফর, গণতন্ত্রী পার্টির জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গুলজার আহমেদ , সাম্যবাদী আন্দোলন জেলা সদস্য এডভোকেট রনেন সরকার রনি, বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা সদস্য মোখলেছুর রহমান, উদীচী জেলা সভাপতি এনায়েত হাসান মানিক, চা শ্রমিক অধিকার আন্দোলন এর আহবায়ক হৃদেশ মুদি, চা শ্রমিক ফেডারেশনের সংগঠক বীরেন সিং, সিলেট ভ্যালীর সাবেক সভাপতি শ্রীবাস মাহালী, খাদিম বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি সবুজ তাতীঁ, বড়জান চা কারখানা সভাপতি বিলাশ ব্যানার্জী।
সংহতি সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সিপিবি সিলেট বিভাগের সমন্বয়ক এডভোকেট আনোয়ার হোসেন সুমন, জাসদ জেলার সাধারণ সম্পাদক কে.এ কিবরিয়া, মহানগর সাধারণ সম্পাদক গিয়াস আহমদ, বাসদ জেলা সদস্য জুবায়ের আহমেদ চৌধুরী সুমন, মহিলা ফোরামের জেলা সভাপতি মাসুমা খানম, উদীচী জেলা সাধারন সম্পাদক দেবব্রত পাল মিন্টু, চারণ সিলেট জেলা আহবায়ক নাজিকুল ইসলাম রানা, খেলাঘর জেলা সভাপতি বিধান দেব চয়ন, যুব মৈত্রী কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিমাশু মিত্র, বাসদ মার্কসবাদী জেলা সদস্য সঞ্জয় কান্তি দাস, জাসদ নেতা নজমুল হক, মাহমুদুল হক চৌধুরী, ফারুক আহমেদ, আরব আলী, গণসংগীত শিল্পী রতন দেব, কলেজ শিক্ষক নিরঞ্জন সরকার, উদীচী লাক্কাতুরা সাধারণ সম্পাদক কাজল গোয়ালা, চালক সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মন্জু আহমদ প্রমুখ।
সংহতি সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য দুই বছর অন্তর অন্তর মালিক, শ্রমিক ইউনিয়ন ও সরকারের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদন হয়। এই চুক্তি নিয়ে সব সময় মালিকপক্ষ তালবাহানা করে। দৈনিক মজুরি ১০২ টাকা থাকাকালীন সময়ে প্রায় তিন বছর প্রায় তিন বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হবার পর অনেক ছলচাতুরির মাধ্যমে মজুরি মাত্র ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সেই ২০১৯-২০ সালের চুক্তির মেয়াদও শেষ হয়ে ১৭ মাস আগে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২১-২২ এর চুক্তির কোন উদ্যোগ নেইনি মালিকপক্ষ। চুক্তি দেরিতে হলে স্থায়ী শ্রমিক এরিয়ার বিল পেলেও অস্থায়ী শ্রমিক তা পায় না। সেই ক্ষোভ থেকেই আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছে চা শ্রমিকরা।
নেতৃবৃন্দ বলেন, চা শ্রমিকরা দৈনিক মজুরি দাবি করছে ৩০০ টাকা।বর্তমানে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম শ্রমিকদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে।সব সেক্টরের শ্রমিকদের অবস্থা খুবই শোচনীয়,চা বাগানের ক্ষেত্রে অবস্থা আরো অমানবিক, নাজুক।বর্তমান বাজারের সাথে চা শ্রমিকদের এই মজুরি গ্রহণযোগ্য তো নয়ই,বরং অযৌক্তিক ও অন্যায়।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে শ্রমিক পরিবারের নুন্যতম শারীরিক চাহিদা পূরন, জীবনযাত্রার খরচ, চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষা, পোশাকসহ আনুসাঙ্গিক খরচ ইত্যাদি বিচারবিবেচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিউট হিসেব করে দেখিয়েছেন ৫ সদস্যের একটি পরিবারের নুন্যতম খাবারের জন্য ৬২৫ টাকা দরকার হয়, যা বর্তমান জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারনে আরো বেড়েছে। চা বাগানের সার্বিক দিক বিবেচনা করলে একটি পরিবার ৫০০/- টাকা দৈনিক মজুরি ছাড়া নূন্যতম মানবিক জীবন যাপন করতে পারে না। তাই সেই প্রেক্ষাপটে চা বর্তমান ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরি করার আন্দোলন শতভাগ যৌক্তিক। কিন্তু মালিকপক্ষ বিভিন্ন গোজামিল ও ফাঁকির হিসাব দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করছে।
সভাপতির বক্তব্যে বেদানন্দ ভট্টাচার্য বলেন, চা শ্রমিকদের আন্দোলনকে বানচাল করার জন্য সরকার ও মালিক পক্ষ নানা ষড়যন্ত্র করছে। চা শ্রমিকদের এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় ঐক্য বদ্ধ থাকতে হবে। নিজেদের অধিকার রক্ষার আন্দোলন শক্ত হাতে চালিয়ে যেতে হবে। তিনি চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বৃদ্ধির এই আন্দোলনে সকল শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে আহবান জানান।